শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো করা হয়ে থাকে। এই তিথিকে শ্রীপঞ্চমীও বলা হয়। এদিন স্কুল-কলেজ-সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং বাড়িতেও সরস্বতী পুজো করা হয়। তবে করোনা সংক্রমণের জেরে স্কুল-কলেজে ঘটা করে এই উৎসব পালিত হচ্ছে না। যে বাড়িতে ছোট বাচ্চা বা ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, সেখানে এখনও এই পুজো করা হয়। বাড়িতে পুরোহিত ডেকে এনে পুজো করানো হয়। তবে করোনার কারণে তা সম্ভব না-হলে বাড়িতে নিজে সরস্বতী পুজো করতে পারেন। কী ভাবে করবেন জেনে নিন–
পুজোর উপাদান
সরস্বতী দেবীর মূর্তি, সাদা কাপড়, ফুল(পলাশ ফুল), আম্রপত্র, বেলপাতা,কাঁচা হলুদ, সিঁদুর, চাল, ধান, দূর্বা, ফল পাঁচ ধরনের(কলা এবং নারকেল আবশ্যক), কলস, সুপুরি, পানপাতা, ধুপকাঠি, প্রদীপ, দুধ, খাগের কলম এবং দোয়াত।
সকালের নিয়ম
সরস্বতী পুজোর দিন সকাল বেলা উঠে স্নান করার নিয়ম। পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্য সকালে স্নান করা আবশ্যক। স্নানের জলে নিমপাতা ও তুলসী পাতা দেওয়ার নিয়ম আছে। এতে জলের শুদ্ধিকরণ ঘটে। এছাড়া স্নান করার আগে মুখে এবং গায়ে নিম ও কাঁচা হলুদ বাটা মাখতে হয়। এতে আমাদের দেহের শুদ্ধিকরণ ঘটে এবং শরীরের কোনো রকম ইনফেকশন থেকেও এই মিশ্রণ রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। স্নান করার পর যে পুজো করবে তাকে সাদা বা হলুদ বস্ত্র পরিধান করতে হয়।
মূর্তি এবং ঘটস্থাপন
যে স্থানে পুজো করা হবে, তা ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। এবার কাঠের ছোট চৌকি পেতে বা ইট দিয়ে বেদী তৈরি করে নিতে হবে। এর ওপর পেতে দিন সাদা কাপড়। এখানে রাখুন সরস্বতীর মূর্তি বা ফটো।
দেবীর মূর্তিতে সাদা বা হলুদ ফুলের মালা পরিয়ে দিন।
পড়ার বই, খাতা, পেন, পেন্সিল এবং হারমোনিয়াম ঠাকুরের মূর্তিটির পাশে রাখতে হবে। এ ছাড়া একটি নতুন খাতা, বই, পেন, পেন্সিল পাশে রাখুন।
কালির দোয়াতে দুধ ভরে তাতে খাগের কলম রাখুন। দেবীর মূর্তির সামনে দোয়াত ও কলম রাখতে হবে।
এবার ঘটে জল ভরে তার ওপরে রাখুন একটি আম্র পল্লব। তার ওপর পান, সুপুরি, ফুল, দূর্বা রেখে এর ওপর শিষ দেওয়া ডাব রাখতে হবে।
দেবী মূর্তির পাশে একটি গণেশের মূর্তি রাখা উচিত।
আরও পড়ুন: Saraswati Puja: সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে ঠাকুর পাপ দেন! জানুন এই নিয়মের আসল কারণ
পূজারম্ভের নিয়ম
প্রথম পূজ্য গণেশকে ফুল ও বেলপাতা অর্পণ করে পুজো শুরু করতে হবে। তার পর দেবীর চরণে ফুল ও বেলপাতা অর্পণ করুন। এক এক করে সরস্বতীর চরণে পলাশ ফুল, আম্রমুকুল নিবেদন করুন। পুজোর স্থানে একপাশে হলুদ, কুমকুম, চাল, সাদা ও বাসন্তী রঙের ফুল-মালা দিয়ে সাজিয়ে রাখুন।
এ সময় সরস্বতী আরাধনার মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে। এর পর ধুপ ও দীপ জ্বেলে দিন। ফল, মিষ্টি ও নৈবেদ্য অর্পণ করতে হবে। কুল-সহ নানান প্রকারের ফল রাখতে ভুলবেন না। উল্লেখ্য কুলই সরস্বতী পুজোর প্রধান ফল। সরস্বতী পুজোর আগে কুল খাওয়ার রীতি প্রচলিত নেই। অবশেষে পুষ্পাঞ্জলি দিন।
শ্রীপঞ্চমী পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রঃ
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচরসারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তুতে।।
ওঁ সরস্বত্যৈ নমা নিত্যং ভদ্রকাল্যৈ নমা নমঃ বেদবেদান্তবেদাঙ্গ বিদ্যাস্থানেভ্য এব চ।
এষ সচন্দন পুষ্পবিল্বপত্ৰাঞ্জলি সরস্বত্যৈ নমঃ ॥ ( এই মন্ত্রে তিনবার অঞ্জলি দেওয়াবেন।)
পুজো শেষ করে তবেই কিন্তু জল এবং খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। আর ঐদিন কিন্তু পড়াশোনা একদম বন্ধ। আর প্রসাদ হিসেবে ওই দিনের খাবার কিন্তু ফল, খই, মুড়কি, মিষ্টি, খিচুড়ি, লাবড়া ইত্যাদি। পুজোর বাকি মন্ত্রের জন্য কিন্তু প্রয়োজন হবে পুজোর পাঁচালি, যা আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন।
দ্বিতীয় দিনের পুষ্পাঞ্জলি ও দধিকর্মা
পুজোর পরের দিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে পুজোয় ব্যবহৃত বেলপাতায় খাগের কলমগুলি দুধে চুবিয়ে ‘ওম সরস্ব্ত্যই নমঃ’ লিখতে হবে তিনবার। তারপর ফুল ও বেলপাতা সমেত পুষ্পাঞ্জলি দিতে হবে। এর পর ঠাকুরের নৈবিদ্যের খই,দই এবং মিষ্টি দ্বারা গোল মন্ডের মত আকারের প্রস্তুত করতে হবে একটি প্রসাদ যা অত্যন্ত উপাদেয় এবং এই প্রসাদ খাওয়ার জন্য কিন্তু বাড়ির ছোট বড় সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। একে দধিকর্মা বলা হয়। এরপর বই খাতাগুলি সরিয়ে নেওয়া যায়। পুজোর ফুল বেলপাতা সাধারণত আমরা বইয়ের পাতায় রেখে থাকি আশীর্বাদ স্বরূপ। এরপর কিন্তু দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে দেবী মূর্তিটিকে বিসর্জন দেওয়া হয়ে থাকে। দেবী মূর্তি সাধারণত সন্ধ্যেবেলায় বিসর্জন দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: Saraswati Puja 2022 timings: সরস্বতী পুজো শুরু কবে? কতক্ষণ পুজো করতে পারবেন? দেখে নিন নির্ঘণ্ট