পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির বাসনায় পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজ পালন করেছেন গোটা দুনিয়া থেকে আসা ১৮ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান। আরাফাতের পাহাড়ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয় আবেগাপ্লুত ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ তালবিয়ায়।
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, রহমতপ্রাপ্তি ও নিজের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে অশ্রুসিক্ত ফরিয়াদ জানান সমবেত মুসলমানরা। একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন, কুশল বিনিময় করেন। দিনটি ছিল বিশ্ব মুসলমানের মহাসম্মিলনের দিন। তবে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক হাজীর অংশগ্রহণ হয়নি। আগে সউদি আরবের হজমন্ত্রক জানিয়েছিল, এ বছর ২৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ পবিত্র হজব্রত পালন করবেন। যা হবে নতুন ইতিহাস। তবে যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেটি পূরণ হয়নি। সউদি আরবের পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, এ বছর ১৫০টিরও বেশি দেশের; ১৮ লক্ষেরও বেশি হাজীর পদচারণায় মুখরিত হয়েছিল আরাফাতের ময়দান।
এ বছর হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে রবিবার। পবিত্র নগরী মক্কায় কাবা শরিফ তাওয়াফ করে রাতে এশার নামাজের পর সবাই জড়ো হতে শুরু করেন ১০ কিলোমিটার দূরে তাঁবুনগরী মিনায়।সোমবার সারা দিন ও রাত তারা সেখানে কাটান ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তারা জিকির করেন, নামাজ পড়েন জামাতে।এরপর আসে আরাফাত ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন। ইসলামের রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ। মঙ্গলবার ছিল হজের মূল অনুষ্ঠান, ইহরাম বাঁধা হজ পালনরতরা সেখানে খুতবা শোনেন এবং জুমা ও আসরের নামাজ পড়েন।
আরও পড়ুন: Laylatul Qadr 2023: পবিত্র শবে কদরের সন্ধান শুরু আজ রাত থেকেই, জানুন এই রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
এবার হজের খুতবা পড়েন সৌদি আরবের ধর্মীয় পণ্ডিত শেখ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ। খুতবায় তিনি বিশ্বের মুসলমানদের এক থাকার আহ্বান জানান বলে সৌদি গেজেট জানিয়েছে।নামিরা মসজিদ থেকে দেওয়া খুতবায় তিনি বলেন, বিশ্বের মুসলমানদের সংঘাত এড়িয়ে এক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে অপপ্রচার ও গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাই আরাফাতের ময়দানে ছিলেন। সন্ধ্যায় তারা পুনরায় মিনার পথে রওনা হন। ফেরার পথে সন্ধ্যায় মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়েন। সেখানে রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করেন, যা মিনার জামারায় শয়তানের উদ্দেশে ছোড়া হয়। বুধবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছোড়েন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হল হজের আনুষ্ঠানিকতা। আজ থেকে তারা পরিচিত হলেন হাজি হিসেবে।
আরও পড়ুন: Ramadan 2023: জানুন ফিতরা আদায়ের নিয়ম ও কেন আদায় করতে হয়?