সম্প্রতি খাবারে বিষ মিশিয়ে ঢাকার জাপান গার্ডেন সিটিতে মেরে ফেলা হয়েছে বেশ কিছু কুকুর ও বিড়াল (Islam Says)। ২২ নভেম্বর শুক্রবার রাতে এই ঘটনা প্রকাশ পেলে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। ইতিমধ্যে ওপার বাংলার সচেতন নাগরিক সমাজ ঢাকার ] মোহাম্মদপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। কিছুদিন আগে ভারতেও এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। কেরালায় এক গর্ভবতী হাতি খাবারের সন্ধানে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে আসার কারণে নির্দয় কিছু মানুষ তাকে বাজিভর্তি আনারস খেতে দেয়। খাওয়ার পরপরই মুখে বিস্ফোরণ ঘটে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় হাতিটির মুখ ও জিব। অসহ্য যন্ত্রণায় সারা গ্রামে জলের খোঁজে হেঁটে বেড়ায় হাতিটি। খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে যায় ভেলিয়ার নদী পর্যন্ত। জল পেয়েই সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়ে নদীর মাঝে। সেখানেই ঘটে তার মর্মান্তিক মৃত্যু। এমন নিষ্ঠুর প্রাণী হত্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনা হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে এমন ঘটনা একটি গুরুত্বর অপরাধ। চলুন জেনে নেই পশু পাখির অধিকার ও অন্যায় ভাবে তাদের হত্যা নিয়ে কি বলা আছে ইসলামে।মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টির পাশাপাশি মানবজাতির প্রয়োজন পূরণের যাবতীয় ব্যবস্থা রেখেছেন। এবং তাদের কল্যাণে অসংখ্য জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মত তাদেরও রয়েছে এ ভূপৃষ্ঠে বসবাসের অধিকার। তারাও আল্লাহ তাআলার সুবিশাল সৃষ্ট পরিবারের সদস্য। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রাণী সম্পর্কে বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল প্রত্যেকটি জীব এবং (বায়ুমণ্ডলে) নিজ ডানার সাহায্যে উড়ন্ত প্রত্যেকটি পাখি তোমাদের মতোই একেকটি জাতি।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮)।
পবিত্র কোরআনের ৬ নম্বর সুরার নাম করণ করা হয়েছে ‘সুরা আন’আম’ যার অর্থ ‘গৃহপালিত পশু’। এই সুরায় আল্লাহ বিষদভাবে বর্ণনা করেছেন পশুপাখির প্রতি মানুষের করণীয় নিয়ে। সুরার ৩৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “পৃথিবীতে বিচরণকারী সমস্ত জীব এবং আকাশে ডানা ঝাপটে উড়া পাখিরাও তোমাদের মতই সম্প্রদায়। কিতাবে কোনকিছুই আমি বাদ দেইনি। অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাদেরও একত্র করা হবে।” [সুরা আন’আম, আয়াত-৩৮]
এই আয়াত ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় যে, যদিও মানুষ ও জ্বিন ছাড়া অন্য প্রাণিদের পরকাল নেই, তবুও কেয়ামতের দিন সব পশুপাখিদেরও পুনঃজীবিত করা হবে। সেদিন শোনা হবে তাদের অভিযোগ ও ফরিয়াদ। অর্থাৎ, যদি কেউ দুনিয়ায় তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে, তাদের কষ্ট দেয়, হত্যা করে তার ন্যায় বিচার তারা পাবে আবার যদি কেউ তাদের প্রতি মায়া দেখায়, খাবার দেয় বা যত্ন করে, তার প্রতিদানও পাবে।
এছাড়াও মহানবী (স) এর দুইটি বিখ্যাত হাদিস রয়েছে পশু অধিকার নিয়ে। আবু হোরায়রা (র) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেন, “একবার এক পতিতা একটা কুয়ার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন পাশেই একটা কুকুর পিপাসায় মৃতপ্রায় অবস্থায় পরে আছে। তার মায়া হয়। তিনি নিজের জুতা খুলে তা তার মাথার কাপড়ের সাথে বেধে কুয়া থেকে পানি উঠিয়ে কুকুরটাকে খাওয়ান। আর তার এই কাজের জন্য আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করেন।” [সহীহ বুখারি ৩৩২১] অর্থাৎ আল্লাহ’র সৃষ্টি এক প্রাণীর প্রতি দয়া দেখানোর কারণে ওই নারীর সারা জীবনের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন ও তাঁকে জান্নাত দান করেছেন। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এসব প্রাণীর সেবা করলেও আমাদের সওয়াব দেওয়া হবে? তিনি বললেন, প্রতিটি জীবিত প্রাণীর সেবার জন্য সওয়াব আছে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৫০)
আবার বিপরীত একটা হাদিসও আছে। আবু হোরায়রা (র) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেন, “একজন মহিলা জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করেছে একটি বিড়ালের জন্য। সে বিড়ালটিকে বন্দি করে রেখেছিল। তাঁকে খেতেও দেয়নি, খাবার খোঁজার জন্য ছেড়েও দেয়নি, যতক্ষণ না বিড়ালটি মারা যায়।” [সহীহ মুসলিম ২৬১৯]
উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, ইসলামে প্রাণিদের অধিকার কোনভাবেই মানুষের অধিকার থেকে খাট করে দেখা হয়নি। যদি কেউ কোন পশু-পাখির প্রতি দয়া দেখান, শেষ বিচারের দিন আল্লাহও তার প্রতি দয়া দেখাবেন। I