প্রতি বছরের মত এবারও কালীপুজো ঘিরে সেজে উঠেছে ৫১ সতীপীঠের অন্যতম অসমের কামাখ্যা। এখানে মায়ের যোনি পড়েছিল বলে কথিত আছে। মা কামাখ্যা এখানে পূজিতা হন দশমহাবিদ্যা রূপে। দীপাবলিতে এই মন্দির সেজে ওঠে কয়েক হাজার প্রদীপে। আজও সেখানে দীপাবলি পালিত হয় নরকাসুর বধের স্মৃতি নিয়ে। উত্তরপূর্ব ভারতের মানুষের বিশ্বাস, দীপাবলির সূচনা হয়েছিল কামাখ্যা থেকেই।
গুয়াহাটি শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে নীলাচল পাহাড়ে অবস্থান কামাখ্যা মন্দিরের।অম্বাবুচীর সময় প্রচুর ভক্ত সমাগম হলেও দীপাবলির সময়েও ভিড় জমান বহু মানুষ। পুরাণে বর্ণিত আছে, সতীর যোনি পড়েছিল এখানে। সেখান থেকেই এই মন্দির। মন্দিরের তিনটি গম্বুজ। এখানেই অবস্থান মা কামাখ্যার। মন্দিরের ভিতরে অনেকটা নিচুতে বয়ে চলা প্রস্রবণ সব সময় ভিজিয়ে রাখে মায়ের যোনিদেশ। কাম পিঠ নামে পরিচিত এই অঞ্চল ।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, সব থেকে বেশি রহস্য আছে কামাখ্যা মন্দির ঘিরেই। পৌরাণিক কাহিনি ও ইতিহাসের সঙ্গে অসংখ্য লোকগাথা মিশে সেই রহস্য আরও ঘনীভূত করেছে। তাই কামাখ্যাকে ঘিরে সাধুসন্ত থেকে সাধারণ মানুষ সবাই বেশি কৌতূহলী।
ইতিহাস বলছে, গৌড়ের রাজা কালাপাহাড় ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এই গোটা অঞ্চল । এরপর কোচ রাজবংশের রাজা বিশ্ব সিংহ দখল করেন কামরূপ প্রদেশ। তিনি খুঁজে পান ধ্বংস হয়ে যাওয়া মা কামাখ্যার অস্তিত্ব। তার দুই ছেলে নরনারায়ণ ও চিলারায় ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে খনন কার্য চালিয়ে উদ্ধার করেন মা কামাখ্যাকে। ১৬৬৫ সালে কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণ নীলাচল পাহাড়ের কোলে কামাখ্যা মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
কথিত আছে, বশিষ্ঠ মুনি এক সময় এই কামাখ্যাতে যজ্ঞ করেছিলেন। শক্তি সাধনার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র কামাখ্যায় মহাশক্তির পুজোও হয় খুব ধুমধাম করে। দীপাবলির রাতে, প্রতি বছর দেবী কামাখ্যার সঙ্গে পুজো করা হয় লক্ষ্মী এবং কুবেরের। নীলাচল পাহাড়ে এই মন্দিরের দীপাবলির রূপ দেখে দূরদূরান্ত থেকে আসেন ভক্তরা। সকালে এখানে মঙ্গলারতির পরে নিয়ম মেনেই মাকে পূজা করে ভোগ নিবেদন করা হয়।