ফার্সিতে শবে কদর আর আরবিতে লাইলাতুল কদর নামে পরিচিত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অনন্য নেয়ামত। শব ও লাইলাতুল শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত আর কদর শব্দের অর্থ হচ্ছে মাহাত্ম্য ও সম্মান। সুতরাং শবে কদর তথা লাইলাতুল কদর অর্থ হচ্ছে সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা মর্যাদার রাত।
পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান মাস, কোরআন নাজিলের রাত শবে কদর। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার জাবালে রহমত তথা হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে জিবরাইল (আ.)–এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি কোরআন কারিম অবতীর্ণের সূচনা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো।’ (মুসলিম)। এ রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯। আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়। অর্থাৎ ২০, ২২, ২৪, ২৬ ও ২৮ রমজান দিবাগত রাত্রসমূহ।
লাইলাতুল কদর কেবলমাত্র হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের বৈশিষ্ট্য, পূর্বের কোনো নবীর উম্মতের সময়ে লাইলাতুল কদর ছিল না। হাদিসে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাতটি লাইলাতুল কদরের রাত হবে, তা চেনার কিছু নির্দেশন বলেছেন।
আরও পড়ুন: Ramadan 2022: যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় না
তা হল- ১.রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না। ২.রাতটি নাতিশীতোষ্ণ হবে। ৩.মৃদ বাতাস প্রবাহিত থাকবে। ৪.সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত তৃপ্তিবোধ করবে। ৫.কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়ে দিতে পারেন। ৬. ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হবে। ৭. সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে, যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো।
উম্মুল মুমিনীর হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্নিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়াটি পাঠ করব। তিনি বললেন, তুমি বল, আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী।
এর অর্থ হচ্ছে – হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দেন (তিরমিযী)।
লাইলাতুল কদরে আল্লাহ বান্দার নেক দোয়া কবুল করেন। এ রাতে আল্লাহ অধিক সংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যা সকাল না হওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে এক অনন্য শান্তি বিরাজ করে। তাই একজন মুমিন মুসলমানের কাছে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব অপরিসীম।
লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য মুমিন মুসলমান রমজানের শেষ দশকের বেশি বেশি নফল নামাজ, আল-কুরআন তেলাওয়াত, দরুদ ও সালাম,তওবা-ইস্তেগফার, দান-সদকা ইত্যাদি কাজের মধ্যে নিজেকে মগ্ন লাগে।
আরও পড়ুন: Ramadan 2022: রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফের উদ্দেশ্য ও শর্ত