মুসলিম নারীদের বিশেষ পোশাক হিজাব। যা ইসলামি সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতীক। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নিজেদের সম্মান এবং মর্যাদা রক্ষায় মুসলিম বিশ্বে উপকরণ হিসেবে এই পোশাকটির বেশ পরিচিত। সেই হিজাবকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং পর্দার ব্যাপারে ইসলামি বিধান অনুসরণকারী সব মুসলিম নারীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়ে থাকে ‘বিশ্ব হিজাব দিবস।’
‘হিজাব আমাদের মাথার মুকুট, অপরাধ নয়; পরিহিত, নয় নিপীড়িত’ এই প্রতিপাদ্যে বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে দশম হিজাব দিবস। ২০১৩ সাল থেকে পৃথিবীজুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাজমা খানের হাত ধরেই হিজাব দিবসের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হিজাব দিবস পালনের উদ্যোগ নেন তিনি। পরবর্তী সময়ে মুসলিম দেশগুলোতে বেশ ভালোভাবেই দিবসটি পালিত হতে আসছে। বর্তমানে প্রায় ১৫০ দেশে দিবসটি পালিত হয়।
হিজাব দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে নাজমা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে তিনি যখন হিজাব মাথায় স্কুলে যেতেন, তখন তাকে অনেক অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হতো। মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় তাকে ‘ব্যাটম্যান’ ও ‘নিনজা’ বলে ডাকা হত। আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার পর তাকে ডাকা হত ‘ওসামা বিন লাদেন’ ও ‘সন্ত্রাসী’ বলে।
আরও পড়ুন: Concept of Rizq (Sustenance): জানুন রিজিক কমবেশি কেন হয়?
নাজমা বলেন, ‘স্কুলে কেবল আমিই হিজাব পরতাম। এ জন্য আমাকে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। তাই ভাবলাম, অমুসলিম নারীরা যদি মাত্র এক দিনের জন্য হলেও হিজাব পরেন, তাহলে মুসলিম নারীদের আর এ ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হবে না। সেই চিন্তা থেকেই হিজাব দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধম্যেই দিবসটির চেতনা ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফ্রান্স, জার্মানির মতো দেশের বিভিন্ন ধর্মের নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
এলি লয়েড নামে এক ব্রিটিশ খ্রিষ্টান নারী ও তার ১১ বছর বয়সী মেয়েও এখন হিজাব ব্যবহার করছেন। এলি বলছেন, আমি মনে করি মাথা ঢাকার জন্য তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা ঠিক না। তিনি বলেন, আমি যদি মাথায় হ্যাট পড়ি, আমাকে তো কেউ কিছু বলতে আসছে না। টেনে চুল বাঁধলাম বা খোলা রাখলাম বা বেনী করলাম- কেউ কিছু বলছে না, তাহলে হিজাব পরলে কী সমস্যা?
কাউন্সিল অন অ্যামেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাশের বলেন, বার্ষিক এই পদক্ষেপটি ধর্মীয় বিধান মেনে মাথা ঢেকে রাখা নিয়ে যে মিথ্যা ধারণা ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করছে।
আরও পড়ুন: Surrogacy and Islam: সারোগেসি পদ্ধতিতে সন্তান গ্রহণ, জানুন ইসলাম কী বলে?