Koo: Once Presented as an Alternative to X, BJP-Endorsed Microblogging App Koo Shuts Down

Koo: আর ‘কু’ ডাকবেন না মোদী-মিত্ররা! বন্ধ হয়ে গেল টুইটারকে টেক্কা দেওয়ার স্বপ্ন দেখা অ্যাপ

ভারতীয় স্টার্টআপ জগতে দুঃসংবাদ। বন্ধ হয়ে গেল দেশিয় মাইক্রোব্লগিং স্টার্টআপ ‘কু’ (Koo)। বুধবার (৩ জুন), লিঙ্কডইনে সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা অপ্রমেয় রাধাকৃষ্ণ এবং মায়াঙ্ক বিদাওয়াটকা জানিয়েছেন এদিন থেকে তাদের সব পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেল।

অথচ, মাত্র দুই বছর আগেই টুইটারকে হারানোর দৌড়ে ছিল তারা। সেই সময় কু-এর লাইক রেশিও ছিল ১০ শতাংশ, টুইটারের থেকে ৭-১০ গুণ বেশি। সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠারা জানিয়েছেন, ২০২২ সালে ভারতে টুইটারকে হারানোর থেকে মাত্র কয়েক মাস দূরে ছিল কু। তাঁরা আরও দাবি করেছেন, টুইটারের থেকে অনেক কম সময়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল কু। টুইটারের থেকে তাদের সিস্টেম অনেক ভালো ছিল। অ্যালগরিদমেও অনেক এগিয়ে ছিল বলে দাবি করেছে তারা। তাহলে দুই বছরের মধ্যে কী হল? বুধবার নিজেদের বার্তায় দুই সহ প্রতিষ্টাতা জানিয়েছেন, অংশীদারিত্বে সমস্যা, প্রযুক্তিগত ত্রুটি ও অর্থাভাবেই শেষ অবধি ‘কু’ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।

২০১৯ সালে পথ চলা শুরু করেছিল ‘কু’। সদর দফতর ছিল ভারতের টেক-রাজধানী বেঙ্গালুরুতে। বর্তমানে ‘এক্স’, তৎকালীন ট্যুইটারের আদলেই বানানো ‘কু’-এর প্রতীকটিও ছিল ‘ট্যুইটারের’ আদলে বানানো, হলুদরঙা cuckoo বা কোকিল। শুরুতে যদিও তেমন ব্যবহারকারী বাড়েনি ‘কু’-এর। কিন্তু হঠাৎই তাদের কপাল খুলে যায়। সৌজন্যে, রাজনীতি।

২০২১ সাল। তিনটি কৃষি আইন পাশ করানো নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠল ভারতবর্ষ। নূন্যতম সহায়ক মূল্য তুলে দিয়ে কৃষকদের কর্পোরেট দুনিয়ার অধীন করে তোলা হচ্ছে, এই আশঙ্কায় রাস্তায় নামলেন হাজার হাজার কৃষক।নরেন্দ্র মোদী সরকারের একচ্ছত্র ক্ষমতায় কোণঠাসা বিরোধীরা একসুরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামলেন। এই অবস্থায় বিজেপি সরকারের সঙ্গে দ্বৈরথে জড়িয়ে পড়ে ট্যুইটার। মোদী সরকার নির্দেশ দেয়, একাধিক ট্যুইটার অ্যাকাউন্টকে ‘ব্লক’ করে দিতে হবে। যার মধ্যে ছিল একাধিক সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিক ও বিরোধী নেতারা। সরকারের অভিযোগ ছিল, তারা ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে। ট্যুইটার প্রাথমিকভাবে নির্দেশ মেনেও নেয়। কিন্তু কয়েকটি অ্যাকাউন্ট তারা বন্ধ করতে অস্বীকার করে। জ্যাক ডরসির নেতৃত্বাধীন ট্যুইটার প্রশাসন জানিয়ে দেন, ওইগুলি বন্ধ করতে হলে বাকস্বাধীনতার পরিসর বলে কিছু থাকবে না।

এতেই পাল্টা ফুঁসে ওঠে বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, ভারতীয় আইন না মানলে ভারতে সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। এই অবস্থায় দলে দলে বিজেপি নেতারা ট্যুইটার ছেড়ে ‘কু’-এর দিকে যাত্রা শুরু করেন। আবেদন করেন, সমর্থকরাও একইভাবে ট্যুইটার ছেড়ে ‘কু’-তে যোগ দিন। তালিকায় ছিলেন পীযুষ গোয়েল, রবিশঙ্কর প্রসাদের মত হেভিওয়েট নেতারা। তাঁদের আহ্বানে দলে দলে শাসক দলের সমর্থকরা যেতে শুরু করেন কু-তে। তরতরিয়ে বাড়তে থাকে গ্রাহক সংখ্যা। সেই সময় কু-এর দৈনিক ব্যবহারকারী ছিলেন প্রায় একুশ লক্ষ! স্রেফ রবিশঙ্কর প্রসাদের ‘ফলোয়ার’-ই ছিলেন কুড়ি লক্ষ। ভারতের বাইরেও কিছু কিছু দেশে ব্যবসা বাড়াতে শুরু করে ‘কু’। মোদী সরকারের মন্ত্রীরা একে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-তে ভারতের সাফল্য বলে যথারীতি প্রচার করতে শুরু করেছিলেন।

বাণিজ্যিক পত্রিকা ফোর্বস বলছে, ট্যুইটারের সঙ্গে প্রচুর মিল ছিল ‘কু’-এর। কিন্তু তারপরেও, কু হয়ে উঠেছিল মুখ্যত বিজেপি-ঘেঁষা সমর্থকদের বিচরণভূমি। বাড়বাড়ন্তের পর্যায়ে ছিল মুসলিম বিরোধী ঘৃণাভাষণ। কু-প্রতিষ্ঠাতারাও মুখে নিরপেক্ষতার কথা বলতেন কিন্তু ঝুঁকে থাকতেন দক্ষিণপন্থী ব্যবহারকারীদের দিকে। যার ফলে নিরপেক্ষ মঞ্চের বদলে বিশেষ রাজনীতির কারবারিদের জায়গা হয়ে যায় ‘কু’।

অপ্রমেয় রাধাকৃষ্ণ এবং মায়াঙ্ক বিদাওয়াটকা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ শিখরে থাকা অবস্থাতেই সংস্থায় আঘাত হেনেছিল তহবিলের অভাব। যার ফলে, তাদের যাবতীয় পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছিল। আর সেখান থেকেই বৃদ্ধির গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছিল কু।তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ভারত থেকে তাঁরা একটি আন্তর্জাতিক সোশ্যাল মিডিয়া ব্র্যান্ড তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে ৫-৬ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রয়োজন ছিল। অ্যাপটি তাঁরা চালু রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু, তার যে খরচ তা বহন করার ক্ষমতা তাদের নেই। তাই এই ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিতে হয়েছে তাদের।  সংবাদসংস্থা বিবিসি জানাচ্ছে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে মোট ২৬০ সদস্যের কর্মীদলের ৩০ শতাংশকে ছাঁটাই করেছিল কু। বিনিয়োগ না পাওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছিলেন কর্তারা। শেষ অবধি বন্ধই করে দিতে হচ্ছে তাঁদের।