রিয়ো, টোকিয়োর পর প্যারিস। গত দু’বারের মতো এ বারের অলিম্পিক্সেও মহিলাদের ফেন্সিংয়ে মিশরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন নাদা হাফেজ। পেশায় তিনি প্যাথলজিস্ট। গত দু’বারের মতো তিনি একা লড়াই করেননি। প্যারিসে তাঁর সঙ্গী ছিল গর্ভে থাকা সাত মাসের সন্তান!
২৬ বছরের নাদা পেশায় একজন প্যাথোলজিস্ট। এই নিয়ে টানা তিনবার অলিম্পিক্সে অংশ নিলেন তিনি। এই বার প্রস্তুতি পর্ব চলার সময়েই জানতে পেরেছিলেন সুখবর। সকলে ভেবেছিল, এবার হয়তো অলিম্পিক্সে আর যাওয়া হবে না নাদার। তিনি বাতিল করবেন প্রতিযোগিতা। সেটাই যে ‘স্বাভাবিক’। কিন্তু নাদা প্রমাণ করে দিলেন মাতৃত্ব আসলে এতই ‘স্বাভাবিক’, যে তার জন্য কিছু বন্ধ রাখার দরকার নেই। এমনকি অলিম্পিক্সও। তাই মিশর থেকে প্যারিসের মঞ্চে হাজির হন তিনি। সোমবার নিজের প্রথম ম্যাচে আমেরিকার এলিজাবেথ তার্তাকোভস্কিকে ১৫–১৩ পয়েন্টে হারিয়ে ওঠেন শেষ ষোলোয়।
তবে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিযোগী হা–ইয়াং জিওনের কাছে ৭-১৫ পয়েন্টে হেরে যান তিনি। বিদায়বেলায় চোখের জলেই ফেন্সিং স্ট্রিপ ছাড়েন নাদা। বিদায় নেন অলিম্পিক্স থেকে। কিন্তু সেই বিদায়কে হাততালি আর প্রশংসায় ভরিয়ে দেন দর্শকরা। দর্শকদের অভিবাদনে আপ্লুত হয়ে হাত নাড়ার সময়ে কেঁদেও ফেলেন তিনি।
পরে ইনস্টাগ্রামে জানান, পোডিয়ামে তখন সকলে তাঁকে দেখলেও, আসলে তিনি একা ছিলেন না। সঙ্গে ছিল অনাগত সন্তানও। এ আবেগ ব্যাখ্যার অতীত। তিনি লেখেন, ‘আমি ও আমার সন্তান শারীরিক ও মানসিকভাবে দারুণ খেলেছি, এটাই গর্বের। এটা আমার সত্তাকে পূর্ণ করেছে।’ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অলিম্পিক্স খেলতে পারার জন্য নাদা ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁর স্বামী ইব্রাহিম ইবাব এবং পরিবারের অন্যদের। কায়রোর বাসিন্দা বলেছেন, ‘‘গর্ভাবস্থার এই যাত্রা সহজ নয়। জীবন এবং খেলার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে এই লড়াই আমার কাছেও সহজ ছিল না। তাই এই লড়াই আমার কাছে খুব মূল্যবান। স্বামী এবং পরিবারের অন্যদের পাশে না পেলে এত দূর আসতে পারতাম না।’’
সাত মাসের গর্ভাবস্থায় অলিম্পিক্স খেলতে আসা নাদাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়েরা। প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমীরাও। দেশে ফিরে কিছু দিন খেলা থেকে দূরে থাকার কথা জানিয়েছেন ২৬ বছরের ফেন্সার। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর সুস্থ হয়ে আবার তরোয়াল হাতে লড়াই করতে নামবেন দেশের জন্য।