বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। তার মধ্যেই অন্যতম পয়লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ। নতুন বঙ্গাব্দকে আবাহন করার দিন। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই দিনটির সঙ্গে বাঙালির আবেগ, ভাবনা ও উচ্ছ্বাস জড়িয়ে। আকবরের আমলের কর আদায়ের একটি ক্যালেন্ডারেই রমরমা শুরু পয়লা বৈশাখের। বাঙালির নতুন বছর সেই তারিখপঞ্জিরই উদযাপন।
সাধারণত ১৪ এপ্রিল থেকে বাংলা নতুন বছর শুরু হয়। অর্থাত্ বেশিরভাগ বছরেই ১৪ এপ্রিল পড়ে পয়লা বৈশাখ। এই বছরেও তার অন্যথা হয়নি। ১৩ এপ্রিল শনিবার পড়েছে চৈত্র সংক্রান্তি। আর তার পরের দিন ১৪ এপ্রিল ২০২৪ রবিবার পালিত হবে পয়লা বৈশাখ। সেদিন থেকেই শুরু হবে ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
‘হাল’ শব্দটি সংস্কৃত ও ফারসি, দু’টি ভাষাতেই পাওয়া যায়। সংস্কৃত ‘হল’ শব্দের অর্থ লাঙল। তার থেকে বাংলায় এসেছে হাল। আর ফারসি ভাষায় ‘হাল’ মানে হল নতুন। বৈশাখে সে কালে নববর্ষ পালনের উৎসব হত না, সেটি ছিল ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার দিন। আর এই সময় রাজা, মহারাজ, সম্রাটরা প্রজাদের কাছ থেকে কৃষিজমির খাজনা আদায় করতেন। ভারতে মোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করতেন। চাঁদ দেখে হিজরি সন গণনা করা হত।
এদিকে বাংলায় চাষবাস হত সৌরবছরের হিসেব অনুযায়ী। ফলে অসময়ে ও অকালে কৃষিপণ্যের বিপুল খাজনা দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতেন চাষিরা। পরবর্তীসময়ে প্রজাদরদী সম্রাট আকবর এসে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ‘ফসলি সন’, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। আকবরের আমল থেকেই পয়লা বৈশাখের গুরুত্ব। যার মধ্যে ধর্ম নয়, বঙ্গজীবনে আর্থিক বছরের যোগ রয়েছে। বাঙালিরা মনে করতেন, আর্থিক বছরের শুরুর এই দিনটি থেকে সমৃদ্ধি, সুখ, নতুন প্রত্যাশা বাড়তে থাকে।