UP Vote, Fight Between AKhilesh's Krishna vs yogi's Ram

ইউপির ভোট যুদ্ধ : যোগীর ‘রাম’ বনাম অখিলেশের ‘কৃষ্ণ’

আগে ভোট এলে রাজনৈতিক দলগুলি উন্নয়নের কথা ফেরি করত। স্বাধীনতার পর থেকেই তেমনটা হয়ে আসছিল। তবে তার পরিবর্তন হয়েছে বিগত ৮-৯ বছরে।এখন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নাকি লোকে আজকাল আর তেমন খায় না।সেই জায়গা দখল নিয়েছে গরম হিন্দুত্ব ও নরম হিন্দুত্ব। তার প্রচারেই অধিক সময় ব্যায় করতে দেখা যায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলকে। হিন্দুত্ব প্রচার আপত্তিকর কিছু নয়। তাতে যদি হিন্দুধর্মের জয়গাথা থাকে তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু এর প্রচারককরা আজকাল হিন্দুত্বকে বিদ্বেষের সমার্থক করে প্রচারে নেমেছে । গেরুয়াধারীরা খুলে আম মুসলিম গণহত্যার নিদান দিচ্ছেন।অ্যাপ বানিয়ে মুসলিম মহিলাদের নিলামে তোলা হচ্ছে। তাদের কারা কারা ভোগ করতে চান তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। ‘সুল্লি ডিলস’, ‘বুলি বাইয়ের’ পর এবার মুসলিম মহিলাদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যের জন্য বাজারে ছাড়া হয়েছে ক্লাব হাউস অ্যাপ।

প্রতিদিন মুসলিমদের হেনস্থা করা হচ্ছে। অথচ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব চুপ। এখন অবশ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলতে বোঝায় মোদী-অমিত শাহকে। মোদী অবশ্য এখনও পর্যন্ত হরিদ্বারে মুসলিমদের গণহারে হত্যার নিদানে কিংবা মুসলিম মহিলাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে একটি কথাও খরচ করেননি। লোকে বলছে ইউপি নির্বাচন শেষ না হলে তিনি এই বিদ্বেষ প্রচারকদের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলবেন না। বরং বিজেপি ভোট বাড়াতে তিনি ঔরঙ্গজেব-শিবাজীর তুলনা টেনে মেরুকরণ ভাষণ জারি রাখবেন।হিন্দুত্ববাদীদের আইকন তিনি। গুগলে হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা বলে সার্চ দিলে মোদির নাম ও ছবি উঠে আসে। তাই এই বিদ্বেষীদের থামাতে পারবে না কেউ। কারণ এই বিদ্বেষের ফসল কেটে ঘরে তুলতে চাইছে বিজেপি। সে কারণেই মুসলিম মহিলাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন সোশ্যাল সাইটে অবমাননাকর মন্তব্য বিক্রি হচ্ছে।

পাঁচ রাজ্যে ভোট হলেও উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন বিজেপির কাছে পাখির চোখ। বিজেপির কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল তাদের দলের ভিতরের কোন্দল।যোগীর ওপর চোটে রয়েছে ইউপির বিজেপি নেতারা।মনুবাদী রাজনৈতিক ফর্মুলায় সাধারণত দলিতদের পার্টির শীর্ষে তোলা হয় না।তা নিয়েই ইউপিতে দলিতদের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে ক্ষোভ।তবে আরএসএস এবং মোদীর হাত রয়েছে যোগীর মাথায়। তাঁর শাসনকালে ইউপি অপরাধের পরিসংখ্যানে শীর্ষ স্থান দখল করেছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বেহাল দশা। এ কেবল নিছক বিরোধীদের অভিযোগ নয়, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থাই এই তথ্য দিয়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী যোগীর পিঠ চাপড়েছেন।

এই পিঠ চাপড়ানো যে নিছকই বিদ্বেষ ফেরির জন্য তা বুঝতে বাকি নেই কারও। মোদীর স্টাইলে যোগীও মুসলিম ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে ‘ছায়া যুদ্ধ’ করেন। মুঘল ও সুলতানি জমানার মুসলিম স্থাপত্য, সৌধ এবং জায়গার নাম বদলকে তিনি পবিত্র কর্তব্য মনে করেন। তবে তাঁর এই চেষ্টা বড় বেশি ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। তা রাজনৈতিকভাবে ভাবে কতটা কাজ করবে তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ বিজেপির অন্দরেই। যোগীর একনায়কতন্ত্রী মনুবাদী মানসিকতার কারণে ইউপির দলিত নেতারা ক্ষোভে ফুঁসছে। তার সুযোগ নিচ্ছে অখিলেশের সপা। যোগীর ঢাল আজও সেই ভগবান শ্রীরাম। উল্টো দিকে ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে দাঁড় করিয়েছেন অখিলেশ। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তাঁর স্বপ্নে এসে বলেছেন, এবার ইউপিতে হবে সপা সরকার। এবারের ইউপি নির্বাচন সেই অর্থে ‘রাম বনাম কৃষ্ণের লড়াই’।

রইল বাকি মুসলিমদের ভূমিকা। ইউপির যেখানে মুসলিমরা খানিকটা সংখ্যায় বেশি সেখানে মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর হলেও সার্বিকভাবে তা বড় ফ্যাক্টর হবে না। মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর না হলেও মুসলিম ইস্যুও বিজেপির কাছে সবথকে বড় বিষয়। তাদের গালাগাল না করলে বিদ্বেষী ভোট ইভিএমে টানা যাবে না বলে মনে করে তারা। যদিও সম্প্রতি বিজেপির গুরু আরএসএস দাবি করেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মুসলিরা সবথেকে সুখে আছে। সেখানে তারা উন্নতিও করেছে। কিন্তু তা বলে ইউপিতে এখনও বিজেপি একজন মুসলিমকেও প্রার্থী করেনি । তবে দলিতদের মন রাখতে বাড়ানো হয়েছে দলিত প্রার্থীর সংখ্যা।তাতে কি বিজেপির ভাঙন রোখা যাবে? এটিই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন।