রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে অবাধ ও স্বচ্ছ ভোটের জন্য হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ, সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই ভোট করতে হবে। খারিজ হয়ে গেল রাজ্য এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আর্জি।
‘স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের সেই নির্দেশে হস্তক্ষেপ করতে আমরা আগ্রহী নই। তাই কমিশন ও রাজ্যের স্পেশাল লিভ পিটিশন খারিজ করা হল’, রাজ্যের আবেদন খারিজ করে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নাগরত্না।
এদিনের শুনানিতে রাজ্যের সওয়াল ছিল, গত ১৩ জুন প্রথম নির্দেশ দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ জুন ফের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির কী পরিবর্তন হয়েছে?
এদিকে কমিশনের আইনজীবী আজ আদালতে যুক্তি দেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি রাজ্য দেখে। তবে এই ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।’ এই আবহে বিচারপতি নাগরত্না পালটা প্রশ্ন করেন, ‘নিরাপত্তার দায়িত্ব যখন আপনাদের নয় তাহলে বাহিনী নিয়ে আপত্তি কীসের? বাহিনী যেখান থেকেই আসুক, আপনারা আপনাদের কাজ করুন। এই পরিস্থিতিতে হাই কোর্ট অবস্থা বুঝে নির্দেশ দিয়েছে। তাতে কোনও সমস্যা আমার চোখে পড়ছে না।’
বিচারপতির মন্তব্য, ‘নির্বাচন করানো মানে হিংসার লাইসেন্স দেওয়া নয়। হিংসা কখনও নির্বাচনের সহযোগী হতে পারে না।’ রাজ্যে ২০১৩, ২০১৮ সালের নির্বাচনে গন্ডগোলের উদাহরণ আছে, আরও মন্তব্য করেন বিচারপতি। ‘প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করতে পারছেন না, জমা করলেও হিংসার সম্মুখীন হচ্ছেন। সংঘর্ষ হচ্ছে’, সংযোজন বিচারপতির।
শুনানি চলাকালীন আজ বিচারপতি নাগরত্না আজ রাজ্য কমিশনকে বলেন, ‘এমনিতে আপনারা পঞ্চায়েত ভোটের জন্য পাঁচ রাজ্যের থেকে পুলিশ চেয়েছেন। এদিকে হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হলে তার খরচ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে। তাহলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?’
সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পরই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অন্দরে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়৷ জানা গিয়েছে, প্রতিটি জেলার জন্য ২ কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইবে কমিশন৷ এছাড়াও উত্তেজনাপ্রবণ এবং অতি সংবেদনশীল এলাকার জন্য আরও বেশ কিছু কোম্পানি চাইবে নির্বাচন কমিশন।
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা সুপারিশ আকারে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাবে৷ এর পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি পাঠানো হবে৷
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের যে অনীহা ছিল, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর একরকম বাধ্য হয়েই এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতে হচ্ছে কমিশনকে৷