বাংলায় ৬টি বিধানসভা আসনের উপ নির্বাচনে ৬টিতেই জিতল তৃণমূল কংগ্রেস (West Bengal Assembly Election 2024 Results )। শুধু জিতল বললে হয়তো একটু কমই বলা হবে। প্রায় সব আসনেই বিপুল ব্যবধানে জিতেছে শাসক দল। এমনকি কোথাও কোথাও সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটের তুলনায় ব্যবধানও অনেকটাই বাড়িয়ে ফেলেছে তারা।
শহুরে নাগরিকরা অনেকেই মনে করেছিলেন মিডিয়া পরিচালিত এই শহুরে প্রতিবাদ রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু তা হয়নি। সমগ্র কলকাতা জুড়েও এর প্রভাব ছিল না। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। তারা এই আন্দোলনকে ফ্যান্সি প্রতিবাদ বলেই মনে করেছিল। বরং যত দিন যাচ্ছিলো তারা জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর বিরক্ত হচ্ছিল। কিন্তু মিডিয়া তখন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছিল যে কেউ মুখে কিছু বলতে পারছিল না। বাংলার মানুষ এই প্রতিবাদের মধ্যে যুক্তি খুঁজের পায়নি।
গত এক মাসে দেখা গিয়েছে, উপ নির্বাচন নিয়ে বাংলার রাজনীতিতে কোনও উন্মাদনাই তৈরি করতে পারেননি বিরোধীরা। না বিজেপি তা পেরেছে, না বামেরা তা পেরেছেন। কেননা যে ৬টি আসনে উপ নির্বাচন হয়েছে, সেখানে বিজেপি বা বামেদের সংগঠন বলে কোনও বস্তুই নেই। মাদারিহাট, সিতাই, মেদিনীপুর ও তালড্যাংরায় বিজেপির যাও কিছু সংগঠন রয়েছে। সিপিএমের তাও নেই। হাতেগোণা, নিষ্ঠাবান কিছু কট্টর বামপন্থী ভোট রয়েছে মাত্র। সেটুকুই পেয়েছেন বামেরা। তার বেশি একটা ভোটও হয়তো তাঁরা পাননি। সুতরাং সংগঠন বলে যদি কোনও বস্তু না থাকে, জমি দখলের লড়াইয়ে শাসক দলকে যদি তারা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মেপে নিতে পারে, তাহলে দিন বদল হবে কোথা থেকে?
কেউ কেউ বলতে পারেন, এই ভোটেও বোঝা গেল লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারের প্রভাব ভরপুর রয়েছে। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটের মেরুকরণ স্বভাবমতই ঘটে গিয়েছে তৃণমূলের দিকে। তা অবশ্যই ঠিক। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ যুক্তিও মজবুত নয়। সাগরিদিঘিতে উপ নির্বাচনের সময়েও লক্ষ্ণীরভাণ্ডার প্রকল্প ছিল। কিন্তু সঠিক সমীকরণ, সংগঠন ও লড়াই করার জেদ দিয়ে তা ভেঙে দিতে পেরেছিলেন অধীর চৌধুরী।
তবে প্রতিবাদের নাম করে হয়ে রাজনৈতিক ফিফা লাভের সাহসটা হয়েছিল তা অনেকেই পছন্দ হয়নি। তাছাড়া দ্রুত গোটা বিষয়টি সিবিআইয়ের হাতে চলে যাওয়ায় মমতা প্রশাসনকে যুক্তিসম্মতভাবে দায়ী করা যায়নি। মানুষ মুখে না বললেও ব্যক্তিগত পরিসরে অনেকেই বলছেন এর থেকে সরকার আর কী বা করতে পারত। মোদ্দা কথা হল, আর জি করে নামে বামেরা যে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির ধান্দায় ছিল তা সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া বামরা যখন প্রেক্ষাপট থেকে বিজেপিকে সরিয়ে দিল তখন মমতার সফল আস্বস্ত হয়। তারা বুঝে নেয় এই আন্দোলনের মধ্যে নাটকীয়তা যতটুকু আছে বাস্তবতা ততটুকু নেই। তবে বিজেপি যদি ঢুকতে পারতো এবং হিন্দু মুসলিম বিভাজন করে দিত, তাহলে তা মমতা সরকারের জন্য চাপের ছিল। এক্ষেত্রে বলতে গেলে বামেরা পরোক্ষে মমতাকে সাহায্যই করেছে।