নিখোঁজ হওয়ার ২২ দিন পর উদ্ধার হল যুবকের গলাকাটা দেহ। পরিবারের দাবি, শুভজ্যোতি বসু নামে ওই যুবককে খুন করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।
নিহত শুভজ্যোতি পানিহাটি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। গত ১৩ মার্চ হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা পূজা রায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এর সাত দিন পর বাপের বাড়ি ফিরে যান পূজা। আর শ্বশুরবাড়ি আসেননি।গত ১ মে শুভজিৎকে শ্বশুরবাড়ি ডেকে পাঠান পূজা। স্ত্রীর ডাক পেয়ে উত্তরপাড়ায় শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন শুভজিৎ। বাড়িতে জানিয়ে যান, পরদিন ফিরবেন। কিন্তু পরদিন বাড়ি ফেরেননি শুভজিৎ।
এর পর তাঁকে ফোন করেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। গত ৬ মে বাড়িতে ফোন করে শুভজিৎ জানান, তাঁর ওপর নির্যাতন চলছে। এর পর খড়দা থানার দ্বারস্থ হয় শুভজিতের পরিবার। দায়ের হয় নিখোঁজ ডায়েরি। শুভজ্যোতির বৃদ্ধ বাবা-মাও ছেলেকে খুঁজে পেতে পুলিশের দারস্থ হন। তিনবার অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু খোঁজ পাননি ছেলের। অবশেষে ২২ দিন পর শুভজ্যোতির মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে পুলিশ মৃতের পরিচয় জানতে পারেনি। পরে শুভজ্যোতির বাবা-মাকে ডেকে পাঠিয়ে দেহটি সনাক্ত করানো হয়। ছেলের হাতে ট্যাটু দেখেই শুভজ্যোতির দেহ চিনতে পারেন তাঁর বাবা-মা। ওই যুবককে খুনের অভিযোগে রবিবার তাঁর স্ত্রী, বান্ধবী এবং বান্ধবীর স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: মরশুমের সবচেয়ে শক্তিশালী কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড দক্ষিণবঙ্গ, ৯০ কিমি বেগে বইল ঝড়
তদন্তে জানা গিয়েছে, পেশায় যৌনকর্মী উত্তরপাড়ার চন্দনা চট্টোপাধ্যায় ওরফে পূজার সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয়েছিল শুভজ্যোতির। ১৩ মার্চ পূজার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তবে বিয়ের কয়েক দিন পর পূজা তাঁর বান্ধবী শর্মিষ্ঠা অধিকারীর বাড়ি উত্তরপাড়ায় চলে যান। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে মাঝেমধ্যে উত্তরপাড়ায় যেতেন শুভজ্যোতি। ১ মে পূজার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। পরের দিন শ্রীরামপুর থেকে তাঁর মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়।
মূল অভিযুক্ত সুবীর জানিয়েছে, পূজাকে বিয়ে করার দেড় মাস পর শুভজ্যোতির নজর পড়েছিল তার স্ত্রী শর্মিষ্ঠার দিকে। সে শর্মিষ্ঠাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই কথাই জানতে পেরেছিল সুবীর। আর সেই আক্রোশেই শুভজ্যোতিকে অপহরণ করে খুন করেছে সে। সোমবার শ্রীরামপুর থানায় চন্দননগর পুলিশের ডিসিপি অরবিন্দ আনন্দ বলেন, ‘‘১ মে কোন্নগরে ডাকা হয়েছিল শুভজ্যোতিকে। সেখানকার একটি ইটভাটায় সুবীর এবং শুভজ্যোতি মদ্যপান করেন। সে সময়ই শুভজ্যোতিকে খুন করে সুবীর। শুভজ্যোতির গলায় চপার চালিয়ে ধড় থেকে দেহ আলাদা করে দেয় অভিযুক্ত। মুণ্ডচ্ছেদ করার পর তা গঙ্গায় ফেলে দেয়। দেহটি প্লাটিক মু়ড়ে ট্রলি ভ্যানে চাপিয়ে শ্রীরামপুরে দিল্লি রোডের ধারে সেল কারখানার পাঁচিলঘেঁষা নর্দমায় ফেলে দেয়। পরের দিন দেহ উদ্ধার করে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ।’’
শর্মিষ্ঠাও পেশায় যৌনকর্মী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুবীর তার স্ত্রীর প্রতি খুবই স্পর্শকাতর। এর আগেও এক যুবক শর্মিষ্ঠাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে সুবীর ওই যুবককেও খুন করার চেষ্টা করে (Khardah)। তবে ওই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান ওই যুবক। ওই ঘটনাতে সুবীর খুনের চেষ্টার অভিযোগে জেলও খাটে। গত দেড় মাস আগেই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে সুবীর।
পুলিশ সূত্রের দাবি, পেশার তাগিদে অনেক সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন পূজা। দিঘা বা তারাপীঠ হামেশাই যেতেন তিনি। সে কারণেই বিয়ের পরেই শুভজ্যোতিকে ছেড়ে উত্তরপাড়ায় শর্মিষ্ঠার ভাড়াবাড়িতে থাকতেন পূজা। যদিও তাঁর পেশা নিয়ে শুভজ্যোতির সঙ্গে অশান্তি ছিল কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: Sutapa Murder: ‘স্মৃতিটুকু থাক…’, মেস থেকে সুতপার শেষ সম্বল নিয়ে গেলেন বাবা