নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়ার অঙ্কের বাইরে গিয়েই জলপাইগুড়ির দুর্গতদের ত্রাণ সাহায্যের ঘোষণা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। শুক্রবার সন্ধেবেলা ক্ষতিগ্রস্ত বার্নিশ এলাকায় গিয়ে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। বলেন, ”মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার কে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।বাড়িঘর তৈরির জন্য এই অর্থ প্রয়োজন। এর জন্য জেলে যেতে হলেও যাব।”
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্য়েই প্রত্যেক পরিবারের অ্য়াকাউন্টে এই অর্থ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন অভিষেক। অথচ নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India) নির্দেশ ছিল, কম ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি মেরামতির জন্য ৫ হাজার এবং বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া যাবে সাহায্য বাবদ। সেই হিসেবের বাইরে গিয়েই ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ দেওয়া হচ্ছে। সেই নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত ৬৩২ টি পরিবারের মধ্যে ৪৪০ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গিয়েছে ২০ হাজার টাকা। প্রশাসনের উদ্যোগে এই অর্থ পেলেও খুশি হননি ক্ষতিগ্রস্তরা। তাঁদের আক্ষেপ ছিল, ঘর তৈরির জন্য প্রয়োজন আরও টাকা। এই সামান্য টাকায় টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরও তৈরি করা সম্ভব নয়। আর শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করে আরও ৪০ হাজার টাকা সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা করলেন অভিষেক। জানালেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই টাকা ঢুকবে ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে।
গত বুধবারের ঝড়ে দুর্গতদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন অভিষেক। এর পর শুক্রবার ময়নাগুড়ির বার্নিশে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে তৃণমূলের সেনাপতি জানান, যদি কমিশন চায়, সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেই পারে। কিন্তু রাজ্য সরকার আর্থিক সাহায্য করবেই। তাঁর কথায়, ‘‘ইসি (নির্বাচন কমিশন) আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে কেস করতে চাইলে করতেই পারে, কিন্তু আমরা অর্থসাহায্য করবই।’’ পাশাপাশি, আবাস প্রকল্পে ‘বঞ্চনা’ নিয়েও বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আবাসের টাকাও ওরা আটকেছে!’’
ঘূর্ণিঝড়ের ১২ দিন পরে এখনও বিপর্যস্ত অঞ্চলের দুর্গতদের অনেকেই খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। সরকারি সূত্রে খবর, প্রশাসনের তরফে ত্রাণশিবির করে দেওয়া হলেও দুর্গতদের অনেকেই সেখানে নানা কারণে থাকতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, কবে ভেঙে যাওয়া ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে? যদিও এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক নির্বাচনী জনসভায় জানিয়েছেন, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু থাকায় তিনি সরকারি ভাবে কোনও ঘোষণা করতে পারবেন না। কিন্তু, আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে রাজ্য প্রশাসনের তরফে যাতে দুর্গতদের ঘর তৈরি করে দেওয়া যায়, সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সেই চিঠির কোনও জবাব এখনও আসেনি। তা নিয়ে ‘টানাপড়েনের’ মধ্যেই এই ঘোষণা করে দিলেন অভিষেক।