তাজপুরে সমুদ্রের ধারে বনদপ্তরের জায়গায় অবৈধভাবে দোকান-ঘর গজিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। তা সরাতে গিয়ে রাজ্যের কারামন্ত্রী তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরির বাধার মুখে পড়লেন দপ্তরের আধিকারিকরা। মন্ত্রীর সঙ্গে তর্কে জড়ালেন বনদপ্তরের আধিকারিক তথা কাঁথির রেঞ্জার মণীষা শ। মন্ত্রী তাঁকে হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার দুপুরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার বেলার দিকে। পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর সমুদ্রসৈকত এলাকায় বন দফতরের জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের সমর্থনে ওই এলাকায় যান অখিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কাঁথি রেঞ্জের ফরেস্ট অফিসার মনীষা সাউ-সহ বন দফতরের অন্য কর্মীরা। অভিযোগ, তাজপুরে বন দফতরের জমিতে দোকান বসিয়েছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সেই দোকান রাতের বেলায় গুঁড়িয়ে দেন বন দফতরের কর্মীরা। আর এতেই ক্ষুব্ধ হন অখিল। বন দফতরের মহিলা আধিকারিকের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আপনি কত বড় অফিসার, আমি দেখে নেব।” জবাবে মহিলা অফিসার বলেন, “স্যর, আমি ডিউটি করছি বলে আমাকে তুলে দেবেন বলছেন?” পাল্টা অখিল বলেন, “আপনাকে নয়, আপনি যেখানে ডিউটি করছেন সেখান থেকে।’’ ফরেস্ট রেঞ্জার বলেন, ‘‘স্যর নাইট ডিউটি করছেন আমার স্টাফেরা।’’ ক্ষুব্ধ অখিলের উত্তর, “আপনাকে কে নাইট ডিউটি করতে বলেছে? আপনি রাত্রি বেলা কেন দোকানগুলো কাটলেন, আমি জানতে চাই।” অফিসারের সাফাই, ‘‘আমরা রাতের বেলা কিছু কাটিনি।’’
মহিলা আধিকারিকের উদ্দেশে অখিলকে এ-ও বলতে শোনা যায়, “ম্যাডাম, আপনি সবাইকে নিয়ে চলুন। না হলে বেশি দিন থাকতে পারবেন না। আপনার আয়ু ৭-৮ দিন, ১০ দিন। আমি আপনাকে বলছি। ফরেস্ট অফিসারের কী দুর্নীতি, আমি জানি। আপনাদের বিরুদ্ধে মানুষের কী অভিযোগ আছে, সব বিধানসভায় আমি ফাঁস করে দেব।” মন্ত্রী বলতে থাকেন, “আপনি এখানে থাকবেন না। ওরা (গ্রামবাসীদের দিকে ইশারা করে) সারা জীবন এখানে থাকবে। আপনি কারও কথা শুনতে চান না।’’ বিতণ্ডার মাঝেই অখিল বলেন, ‘‘২৫ ফুট আমরা নিলাম। এর ভিতরে যদি আপনি আসেন আপনি ফিরে যেতে পারবেন না। বেশি কথা বলবেন না আপনি একদম। আপনি এক জন জানোয়ার, বেয়াদব রেঞ্জার। আপনি সরকারের চাকর। মাথা নিচু করে কথা বলবেন। আপনি একদম বেয়াদবি করবেন না। আপনাকে যখন সবাই ডাঙ দিয়ে পেটাবে, তখন দেখবেন!”
বেশ কিছু সময় ধরে বাগ্বিতণ্ডার পর ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান অখিল। তাঁর মন্তব্য় ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। মন্ত্রীর গ্রেপ্তারি দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি। তাদের প্রশ্ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেবেন? জেলে পাঠাবেন? দলীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রীর আচরণে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। সোশাল মিডিয়ায় নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। কুণাল ঘোষের কথায়, “মন্ত্রী অখিল গিরির কথা এবং আচরণের বিরোধিতা করছি। এটা অবাঞ্ছিত।”
কারামন্ত্রী অখিল গিরির কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা।তিনি বলেন, “কর্মরত অফিসারকে এভাবে কেউ বলতে পারেন না। তিনি যে পদেই থাকুন। যদি কিছু বলার থাকত আমি দফতরের মন্ত্রী, আমাকে উনি বলতে পারতেন। তিনি তা না করে যেটা করলেন সেটা অনভিপ্রেত।” তিনি জানান, সেখানকার ডিএফও ও সিসিএফের থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি। রিপোর্ট পেলেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন। তাঁর কথায়, “যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমি কোনওভাবেই সমর্থন করি না। আমি এর কড়া নিন্দা করছি।”