অনুব্রত মণ্ডল জেলে থাকায় কার্যত নমো নমো করেই এ বছর বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ের শ্যামাপুজো হল। বীরভূমে এই পুজো ‘কেষ্টদা’র কালীপুজো বলেই পরিচিত। এত বছর ধরে এই পুজোয় নিজের হাতে কালীমূর্তিকে সোনার গয়না পরিয়ে এসেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত। সেই পুজোয় এ বছর মায়ের গায়ে উঠল গুটিকয়েক সোনার গয়না!
রাতে শ্যামা মায়ের পুজো। তার আগে সোমবার দুপুরে বোলপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে সাজানো হয়েছে প্রতিমা। তবে উধাও ভারী ভারী গয়না। শুধুমাত্র কিছু হার, সোনার চেন, চারহাতে চারটি বালা, টিকলি, টায়রায় সাজানো হয়েছে প্রতিমা। গতবার অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেছিলেন মায়ের গায়ে ৫৭০ ভরি সোনার গহনা পরানো হয়েছিল। এবার সেসব উধাও। খুব বেশি হলে গহনার পরিমান ৪০ ভরি হবে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, দেবীর যদি ৫৭০ ভরি গহনা থাকে তাহলে তা গেল কোথায়?
আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা: এবার তৃণমূলের তারকা বিধায়ক অদিতি মুন্সির স্বামীকে তলব CBIয়ের
গত বছর পর্যন্ত যে জাঁকজমক ছিল, ফুলে ফুলে সাজতো পার্টি অফিস, সে সব এবার নেই। অতিথিদের প্রসাদে আগে থাকত খিচুড়ি, বলির মাংস, তিনরকম ভাজা, মিক্সড তরকারি, চাটনি, পাঁপড়, মিষ্টি। এবার বেশ কিছু পদও কমেছে। কমেছে আমন্ত্রিতের সংখ্যাও। অনুব্রত মণ্ডল যেখানে পুজোর রাতে আসা সকলকে যত্ন করে খাওয়াতেন সেখানে এবারের আয়োজন শ’তিনেকের।
বিকেলেই হাজির হয়েছেন দলের জেলা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমাদের অভিভাবক নেই। বড় শূন্য লাগছে। তবু তাঁর নির্দেশে সকলে চাঁদা দিয়ে মায়ের পুজোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা হচ্ছে। মাকে যতটা না সাজালেই নয়, ততটা পুরোহিত মশাই সাজিয়েছেন।”
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে নিজের হাতে এই কালীপুজো শুরু করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। দিন দিন বেড়েছে সেই পুজোর জাঁকজমক। ২০১৮ সালে কালী প্রতিমা সাজানো হয়েছিল ১৮০ ভরি সোনার গয়নায়। ২০১৯ সালে গয়নার পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল ২৬০ ভরি। ২০২০ সালে সেই প্রতিমা সাজানো হয়েছিল প্রায় ৩০০ ভরি গয়না দিয়ে। ২০২১ সালে তৈরি হয় সোনার মুকুট। প্রতিমার সোনার গহনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭০ ভরিতে। সীতাহার, চেন, গলার চিক, চূড়, রতনচূড়, মান্তাসা, বাজুবন্ধ, টায়রা-টিকলিও রয়েছে দেবীর। কিন্তু অনুব্রতকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই সিবিআইয়ের নজরে দেবীর ৫৭০ ভরি সোনার গয়না।
‘কেষ্টদা’ জেলে থাকায় তাঁর শ্যামাপুজোর কী হবে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই চর্চা চলছিল। অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, বরাবর এই পুজোর সমস্ত ব্যবস্থাই ‘কেষ্টদা’ করে এসেছেন। নিজে হাজির থেকে পুজোর যাবতীয় আয়োজন সেরেছেন। কিন্তু এ বার কেষ্ট-বিহীন পুজোর জাঁক আদৌ থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন দলের কর্মীদের একাংশ। তাঁদের সেই শঙ্কাই কার্যত সত্যি হল।
আরও পড়ুন: ‘বিরিয়ানিতে কমছে পুরুষত্ব’! আজব দাবি ‘ঘাসফুলি’ রবীন্দ্রনাথের, বন্ধ করলেন ২ দোকান