Berhampore: Cricketer Yusuf Pathan wins Lok Sabha seat from Berhampore, adhir ranjan chowdhury looses

Berhampore: ‘নবাগত’ পাঠানের হাতে ‘বধ’ অধীর! টানা ২৫ বছর পর বহরমপুর ‘হাত’ছাড়া

টানা ২৫ বছর পর বহরমপুর ‘হাত’ছাড়া। অধীর চৌধুরী ভূপতিত। তা-ও রাজনীতির মাঠে নেহাতই আনকোরা ইউসুফ পাঠানের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে জয় পেতে বামদের সঙ্গে জোট বেঁধে ময়দানে নেমেছিলেন অধীর। নিজের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় তাঁর গলায় কাস্তে-হাতুড়ি-তারা আঁকা উত্তরীয় নজর কেড়েছিল। কিন্তু সেই জোট সাফল্য পায়নি। বরং প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফের কাছে ধরাশায়ী হলেন অভিজ্ঞ এই নেতা।

১৯৯৯ থেকে বহরমপুরে জিতছেন অধীর (Adhir Ranjan Chowdhury)। একটা সময় লড়েছেন বামেদের বিরুদ্ধে। প্রথমবার তিনি সত্যিকারের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ২০১৯ সালে। মুর্শিদাবাদের দুর্গ দখল করতে শুভেন্দু অধিকারীকে পাঠালেন তৃণমূল নেত্রী। একে একে তৃণমূলে যোগ দেওয়া শুরু করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সাঙ্গপাঙ্গরা। লোকসভায় নিজের জেলায় দুটি আসন হারালেন অধীর। তবে তৃণমূলের বিজয়রথ সেবার রুখে দিয়েছিল বহরমপুর। সেখান থেকে ৮১ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে গড় রক্ষা করেছিলেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ। সেই সিপিএম প্রকাশ্যেই অধীরের হয়ে ময়দানে নেমেছিল। সে যাত্রায় রক্ষা পেলেও, এ বারের ভোটে জিততে পারলেন না তিনি।

তবে অধীর দুর্গ যে বেশ নড়বড়ে হয়েছে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল নীলবাড়ির লড়াইয়ে। সে বার অধীর অনুগামী মনোজ চক্রবর্তীকে হারিয়ে বহরমপুরে পদ্মফুল ফুটিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুব্রত মৈত্র। বহরমপুর লোকসভার বাকি ছয় বিধানসভা দখল করেছিল তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটেও সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধে কোনও সুবিধাই করতে পারেনি অধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। লোকসভা ভোটেও সেই একই ধারা বজায় রেখে বহরমপুরের পাঁচ বারের কংগ্রেস সাংসদকে হারিয়ে দিল তৃণমূল।

তাঁর জন্য যে এ বারের লোকসভা ভোট কঠিন হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল গত ১০ মার্চ। ওই দিন ব্রিগেড সমাবেশ থেকে বহরমপুরে প্রার্থী হিসাবে ক্রিকেটার ইউসুফের নাম ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে অধীর তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন, বহরমপুরে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হোন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতেই মোক্ষম ‘চাল’ দেন অভিষেক। আর তাতেই বহরমপুরে ‘বাজিমাত’।

এই প্রথম অধীরের মূল প্রতিপক্ষ ছিলেন মুসলিম প্রার্থী। প্রচারে তৃণমূল বলছিলেন, ‘দাদা’ নয়, এবার ভোট দিন ‘ভাইজান’কে। অধীরের ভাষায়, ‘ভাইজান পাঠান।’ আসলে প্রায় ৫০ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বহরমপুরে এ যাবৎকাল সংখ্যালঘু সাংসদ পায়নি। এবার তাই ভাইজানকে সাংসদ হিসাবে পেতে মরিয়া ছিলেন সংখ্যালঘুদের একটা অংশ। পালটা হিন্দুভোট একত্রিত হয়েছে বিজেপির পক্ষে। গেরুয়া শিবিরও এবার বহরমপুরে জয়ের গন্ধ পেয়ে ভালো প্রার্থী দিয়েছিল। অতএব, হিন্দুরা আশ্রয় খুঁজেছেন বিজেপির কোলে। অতএব ধর্মযুদ্ধ। আর সেই ধর্মযুদ্ধের মাঝে পড়ে পিষে গেলেন একা কুম্ভ অধীর। লোক-লস্করহীন ‘সামন্ত’ রাজা। যেটুকু লড়াই তিনি দিলেন পুরোটাই ব্যক্তিগত ক্যারিশমা আর কাল্ট অধীরের নামে। কিন্তু সংগঠনহীন, ন্যারেটিভহীন ‘দাদা’ এবার হার মানলেন ভাইজানের কাছে।