দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে তাঁর প্রতিনিধি রোশন গিরি জানিয়েছেন ‘সর্বোচ্চ স্বশাসনের’ কথা। মুখ্যমন্ত্রী সে বিষয়ে সবিস্তার জানতে চাইলে মোর্চা সূত্রে বলা হয়, ২ এপ্রিল কালিম্পংয়ে বৈঠক করে এর রূপরেখা তৈরি হবে। তার পরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং জানিয়ে দিলেন, জিটিএ ভোট নয়, তাঁরা পাহাড়ে স্থায়ী সমাধানেরই দাবি জানাচ্ছেন। গান্ধীজির ছবিতে মালা দিয়ে তিনি আরও জানান, এ জন্য তিনি আমরণ অনশনও করতে তৈরি।
তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম পাহাড় সফরে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ দিনের পাহাড় সফরে একাধিক কর্মসূচি ছিল তাঁর। তারমধ্যে অন্যতম হামরো পার্টির সঙ্গে বৈঠক এবং জিটিএ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা। সেই মত জিটিএ নিরবাচন নিয়ে তৎপর হন তিনি। এপ্রিল মাসেই জিটিএ নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হবে বলে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে জিটিএ নতুন করে কাজ করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী জিটিএ নির্বাচন নিয়ে তৎপর হতেই তার বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছে মোর্চা। রোশন গিরি সহ একাধিক মোর্চা নেতা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনের বিরোধিতা করেছে। সেই সঙ্গে পাহাড়ের স্বায়ত্ব শাসন দাবি করেছে তারা। রোশন গিরির এই বিরোধিতার সুরেই বিমল গুরুংয়ের বার্তা লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একুশের ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা জানিয়ে পাহাড়ে ফিরেছিলেন বিমল গুরুং। তারপর থেকে মোর্চা কার্যত দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল। ভোটের আগেই মোর্চা ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন বিনয় তামাং। তিনি কিছুতেই বিমল গুরুংয়ের মোর্চায় ফিরে আসা মেনে নিতে পারছিলেন না।
আরও পড়ুন: বগটুই-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি মারপিট বিধানসভায়, সাসপেন্ড শুভেন্দু অধিকারী-সহ ৫ বিজেপি বিধায়ক
একুশের ভোটের আগে থেকেই পৃথক রাজ্যের দাবি উঠতে শুরু করেছিল। উত্তরবঙ্গের উন্নয়ের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের বিজেপি সাংসদরা। ২ এপ্রিল কালিম্পঙে যে কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন গুরুং তাতে নতুন করে বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হচ্ছে বিমল গুরুংয়ের। রাজু বিস্তের সাহায্যে জিটিএ নির্বাচন আটকানোর পরিকল্পনায় রয়েছেন তিনি।
বিধানসভা ভোট এবং দার্জিলিং পুরভোটে অংশ নিলেও জিটিএ ভোটে আর যেতে চাইছেন না গুরুংপন্থীরা। কেন? পাহাড়ের অনেক নেতার মতে, ‘‘দুই ভোটে হারের পরে নিজের হাতে তৈরি জিটিএ-তে পরাজয়ের মুখ দেখতে চাইছেন না গুরুং।’’ আর একটি অংশ মনে করে, ‘‘গুরুংয়ের দলের সংগঠন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা, হামরো পার্টির চাপে তলানিতে। সেখান থেকে দলকে এই ভাবে উস্কে গুরুং নিজেকে প্রাসঙ্গিক করতে চাইছেন।’’ তবে ২০১৭ সালে টানা বন্ধ ডাকা গুরুং এ বারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথাই বলেছেন।
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: লক্ষ্য পঞ্চায়েত ভোট, তৃণমূলের নতুন কর্মসূচি ‘পাড়ায় আমরা’