আশঙ্কাই সত্যি হল। চিন্তন বৈঠকে মুখ খুলেই ঝড় তুললেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee)। সন্ত্রাসের বুলি আউড়ে দলের দুর্বলতাকে ঢাকার যে চেষ্টা সুকান্ত মজুমদাররা করছিলেন তা কার্যত তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন বিজেপির এই দাপুটে নেত্রী। দলের সাংগাঠনিক দুর্বলতা থেকে কমিটি গঠনে স্বজনপোষণ, সবই উঠে এল চিন্তন বৈঠকে তাঁর বক্তৃতায়। ফের একবার আত্মসমালোচনার আহ্বান জানালেন নেত্রী।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁকে মঞ্চে স্থান দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য সেখানে বক্তব্য রাখেন রাজ্য বিজেপির এই লড়াকু নেত্রী। শীর্ষনেতাদের উদ্দেশে লকেটের সাফ কথা, “শুধু সন্ত্রাস-সন্ত্রাস বললেই হবে না। নিজেদের দুর্বলতাটা স্বীকার করতে হবে।”
রাজ্য কমিটি গঠন নিয়ে দলের অন্দরে তোলপাড় হয়েছে। কোন্দলে দল ছেড়েছেন অনেকে। রাজনৈতিক মহল বলছে, রাজ্য বিজেপি আপাতত আড়াআড়িভাবে বিভক্ত। এদিন সেই কমিটি গঠন নিয়েও বার্তা দেন লকেট। বলেন, “যেভাবে কমিটি তৈরি হয়েছে, তাতে যোগ্যতা নয় গুরুত্ব পেয়েছে কোটা। পুরনোদের একেবারে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। সাংসদ, বিধায়কদের সংগঠন থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।” সবমিলিয়ে এদিন ফের একবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ একাধিক শীর্ষ নেতাকে তুলোধোনা করলেন লকেট।
প্রকাশ্যে লকেটের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার লকেটের বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বলেন, ‘‘দলীয় বৈঠকে লকেট চট্টোপাধ্যায় কী বলেছেন তার সবটাই লিপিবদ্ধ রয়েছে।’’ আর দিলীপের মন্তব্য শোনার পরে লকেটের বক্তব্য, ‘‘যা বলার দলের ভিতরেই বলব।’’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে লকেট যে নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলেছেন তা কী করে সংবাদমাধ্যমে জানাজানি হয়ে গেল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি শিবিরে। তবে মুখে স্বীকার না করলেও রাজ্যের শীর্ষ নেতারা লকেট যে সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন তা অস্বীকার করতে পারছেন না। উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা নির্বাচনে সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ায় বেশ কয়েক মাস রাজ্যের বাইরেই ছিলেন লকেট। বাজটে অধিবেশনের সময়ে দিল্লি গেলেও বাংলায় সে ভাবে তাঁকে দেখা যায়নি।
দলে যে তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তা জানানো হলে লকেট বলেন, ‘‘আমি দলীয় বৈঠকের ভিতরে কী বলেছি সেটা নিয়ে যাঁরা প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন তাঁরাই আসলে শৃঙ্খলা মানছেন না। আমি তো বাইরে কিছু বলিনি। দলের ভিতরে বলেছি। এখন যা প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও দলের ভিতরে জবাব দেব। আর দিলীপদা তো সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। তিনি জানেন, আমি কখন, কোথায়, কী দায়িত্বে ছিলাম।’’