CAA কার্যকর হওয়ার পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টের দোরগোড়ায়। বরাবরের মতো এবারও CAA (CAA Law) বিরোধিতায় সুর একেবারে সপ্তমে চড়ালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। হাবরার সভা থেকে তিনি বললেন, ”এর কোনও ভিত্তি নেই, স্বচ্ছতা নেই। ভোটের আগে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা। উনিশের আগেও অসমে এরকম করেছিল। ২০১৯ সালে অসমে এনআরসির নামে ১৯ লক্ষ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১৩ লক্ষ বাঙালি হিন্দু। এটা বেআইনি খেলা। এটা বিজেপির লুডো খেলার ছক্কা। ভাবছে মারলাম ছক্কা। কিন্তু আসলে পুট। জেনে রাখবেন, এর সঙ্গে NRC যুক্ত আছে। পরের ধাপ NRC।”
তাঁর সাবধানবাণী, ”যেই CAA পোর্টালে দরখাস্ত করবেন, তখনই আপনাদের এতদিনকার নাগরিকত্ব (Citizenship) বাতিল হবে। এতদিন যে সুযোগ সুবিধা পেতেন, তা বাদ হয়ে যাবে। তাই দরখাস্ত করার আগে ভালো করে ভেবে দেখবেন।” মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, এটা পুরোপুরি ভাঁওতা, জুমলা। আগে আপনাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে। তার পর CAA-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলবে। কিন্তু সেই অধিকার আবার ফিরে পাবেন কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই।”
আইন তৈরি হয়েছিল ২০২০ সালে। তার পর সোমবার নাগরিকত্ব সংশোধনী সিএএ রুল জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবারেই নবান্ন থেকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মঙ্গলবার হাবড়ার সরকারি কর্মসূচি থেকে কার্যত গর্জে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘একটা কথা মন দিয়ে শুনে নিন! আপনারা কেউ নাগরিকত্বের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করবেন না। করলেই আপনাদের নাগরিকত্ব চলে যাবে। আপনাকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলবে। আপনার সম্পত্তি কেড়ে নেবে। ওই ফাঁদে খবরদার পা দেবেন না!’’
বস্তুত, কেন্দ্রের আইন বাস্তবায়িত হওয়া কোনও রাজ্য সরকার রুখতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বাংলার কারও নাগরিকত্ব যেতে দেবেন না। সবাইকে তিনি আশ্রয় দেবেন। মমতা ছাড়া সিএএ বলবৎ করার ক্ষেত্রে বামশাসিত কেরলও একই ভাবে ‘কট্টর’ অবস্থান নিয়েছে। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও বলেছেন, তাঁদের রাজ্যে সিএএ বাস্তবায়িত হতে দেবেন না। এ বিষয়ে বিজেপির বক্তব্য, কেরল ও বাংলা যে এই অবস্থান নিতে পারে, তা কেন্দ্রীয় সরকরারের ধারণার মধ্যেই ছিল। সে কারণেই এই আইন বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিশেষ ভূমিকার সুযোগ রাখা হয়নি।
সিএএ-এর ‘ফর্ম’ নিয়েও মন্তব্য করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘ফর্মে এক জায়গায় লেখা আছে, বাবার বার্থ সার্টিফিকেটের কথা। যাঁদের এখন ৫০-৬০ বছর বয়স, তাঁদের সবার বাবার বার্থ সার্টিফিকেট আছে? আমি তো আমার বাবা-মায়ের জন্মদিনই জানি না।’’
মঙ্গলবার হাবড়ার সভা থেকে মমতা এ-ও জানিয়েছেন, এই আইন নিয়ে তিনি আইনজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা করা হয়েছে মানুষকে হয়রান করার জন্য। আর দুটো-তিনটে সিট জেতার জন্য।’’ পাশাপাশি, ‘অভয়’ও দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেছেন, ‘‘ওদের আইনটাকে সরিয়ে ফেলে দিন। এখানে বহাল তবিয়তে থাকবেন। কোনও ভাঁওতায় পা দেবেন না। তা হলে এ কূল-ও কূল দু’কূল যাবে। জমিদারদের বিরুদ্ধে আমি আপনাদের পাহারাদার।’’