‘‘হ্যালো! আমি জিন বলছি। মুয়াজ্জেন ঘুমিয়ে পড়ার পর তাঁর ফোন নিয়ে ফোন করছি। আল্লাহ তাঁর হেফাজতে থাকা সাত ঘড়া গুপ্তধন তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেছেন।’’ অক্টোবরের এক নিশুতি রাতে এমন ফোন পেয়ে আর কথাই বলতে পারছিলেন না বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের শ্যামনগর গ্রামের পেশায় রাজমিস্ত্রি আমিনুদ্দিন। এলাকার সবাই তাঁকে ধর্মপ্রাণ বলে চেনেন। প্রথম ফোন পাওয়ার প্রাথমিক ঘোর কাটতে না কাটতেই আবার কিছু দিন পর ফোন। পর পর কয়েক দিন গভীর রাতে ‘অশরীরী’র ফোনে গুপ্তধন পাওয়ার বাসনা চেপে বসেছিল কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালানো আমিনুদ্দিনের। সম্বিত ফিরল প্রায় তিন লক্ষ টাকা খোয়ানোর পর। বাঁকুড়া সাইবার থানায় এমন নতুন প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে বিস্মিত হলেন পুলিশ আধিকারিকরাও।
কী ঘটেছে?
বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা আমিনুদ্দিন মণ্ডল। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। সামান্য রোজগারে কোনও মতে চলে যায়। গত অক্টোবরের শেষ দিকে গভীর রাতে একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে আমিনুদ্দিনের কাছে।
ফোন ধরতেই ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে জিন পরিচয় দেন। বলে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একটি বিশেষ জায়গায় মণি মাণিক্য,হিরে,জহরত ও সোনা ভর্তি সাত ঘড়া ধন রাখা আছে। আল্লাহর নির্দেশে তিন হাজার তিনশো পয়ষট্টি জন জিন সেই সম্পত্তি পাহারা দিচ্ছে। সম্প্রতি দুষ্কৃতীরা ওই এলাকাটিকে অপবিত্র করে দিচ্ছে। তাই আল্লাহর নির্দেশ দ্রুত সেই সম্পদ সরিয়ে তা তুলে দিতে হবে কোনও ধর্মপ্রাণ মানুষের হাতে। সেক্ষেত্রে ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসাবে আল্লাহ আমিনুদ্দিনকেই নির্বাচন করেছেন।
ফোনে এমন প্রস্তাব শুনে হকচকিয়ে যান ওই ব্যক্তি। এরপর থেকে প্রায়ই মাঝরাতে ফোন আসতে শুরু করে আমিনুদ্দিনের কাছে বলে তিনি জানান। শেষ পর্যন্ত আমিনুদ্দিন বিশ্বাস করেন সেই কথা।
এরপর জিন নির্দিষ্ট একটি দিনে সেই সম্পদ আমিনুদ্দিনের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানায়। তবে শেষ মুহুর্তে জিন জানায় আমিনুদ্দিনের বাড়িতে বাস্তু দোষ থাকায় সেই সম্পদ পৌঁছানো যাচ্ছে না। বাস্তু দোষ কাটাতে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালনের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ধাপে ধাপে আমিনুদ্দিনের কাছে অনলাইনে টাকা চাইতে থাকে অশরীরি। দেখানো হয় ধর্মের ভয়ও।
আমিনুদ্দিনের দাবি, প্রথমে জিনের প্রলোভনে পা দিয়ে এবং পরে ভয়ে ধার দেনা করে ধাপে ধাপে মোট ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা পাঠায় আমিনুদ্দিন। এরপর আমিনুদ্দিন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তখনই বাঁকুড়া সাইবার থানায় দ্বারস্থ হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন আমিনুদ্দিন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।