শান্তিতেই মিটেছিল ভোটগ্রহণ। ফলঘোষণা হল শুক্রবার। বিজেপির হাত থেকে ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র এক প্রকার ছিনিয়ে নিল শাসক তৃণমূল। শুক্রবার গণনার শুরু থেকেই টান টান উত্তেজনা ছিল ধূপগুড়িতে। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল ধরে রেখে বিজেপির ‘রায়’ জিতবেন, না কি তা যাবে তৃণমূলের ‘রায়ের’ হাতে? তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছিল। কিন্তু শেষ হাসি হাসল তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়কে ৪,৩০৯ ভোটে হারিয়ে জয় নিশ্চিত করলেন শাসকদলের নির্মলচন্দ্র রায়।
এবারের ধূপগুড়ি বিধানসভা নির্বাচন তৃণমূলের থেকে বড় ‘প্রেস্টিজ ফাইট’ ছিল অভিষেকের বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। দলীয় প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের সমর্থনে প্রচারে গিয়ে ধূপগুড়িবাসীর উদ্দেশে একাধিক তাৎপর্যপূ্র্ণ বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ধূপগুড়ি জয়ের পর নিজের ব্যক্তিগত এক্স হ্যান্ডেল (টুইটারে) দলীয়কর্মীদের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ লেখেন, ‘ঘৃণা ও ধর্মান্ধতার বদলে উন্নয়নের রাজনীতি গ্রহণ করার জন্য ধূপগুড়িকে ধন্যবাদ। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য প্রত্যেক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে ধন্যবাদ। ধূপগুড়ির সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমার প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। সেখানে চেষ্টার কোনও ত্রুটি থাকবে না। জয় বাংলা।’
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: মিলল কেন্দ্রের অনুমতি, লগ্নি টানতে স্পেন এবং দুবাই যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
Thank you #Dhupguri, for embracing the politics of development over hatred and bigotry. Saluting every AITC worker for their tireless efforts in connecting with the people. We’re committed to leaving no stone unturned in ensuring Dhupguri’s all-round development. 🙏🏻
জয় বাংলা 💪🏻
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) September 8, 2023
ধূপগুড়িতে শুক্রবার সকালের লড়াইটা শুরু হয়েছিল সমানে সমানে। পোস্টাল ব্যালট এবং প্রথম কয়েক রাউন্ডের গণনায় এগিয়ে ছিলেন বিজেপির তাপসী। তবে এর পর আস্তে আস্তে খেলা ঘুরতে থাকে। ভোটের নিরিখে বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে ধীরে ধীরে ব্যবধান কমতে থাকে তৃণমূল প্রার্থীর। চলতে থাকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে পঞ্চম রাউন্ডের পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি শাসকদলকে। একে একে প্রতিটি রাউন্ডেই বিজেপিকে চাপে রেখে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সব রাউন্ডের গণনা শেষে দেখা যায়, তাপসীকে চার হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন নির্মলচন্দ্র।
প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একটি উপনির্বাচনেও জয় পায়নি বিজেপি। বিধানসভা ভোটে জেতা জোড়া আসন দিনহাটা এবং শান্তিপুরে উপনির্বাচনে হেরে যায় তারা। ফলে দলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ধূপগুড়ি। অন্য দিকে, একের পর এক উপনির্বাচনে জিতলেও শেষটিতে হারতে হয়েছিল তৃণমূলকে। সাগরদিঘিতে জিতেছিল কংগ্রেস। পরে বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস অবশ্য তৃণমূলে যোগ দিলেও শাসকদলের ভোটে হারার ক্ষত রয়েই গিয়েছে। সেই ক্ষতে খানিক প্রলেপ লাগিয়ে ধূপগুড়ি জিতে নিল তৃণমূল।
এদিন জি ২০ সামিটে যোগ দিতে দিল্লি উড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিমানবন্দরে ধূপগুড়ির জয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ধূপগুড়ির নির্বাচন ঐতিহাসিক নির্বাচন ছিল। বিজেপিকে হারিয়ে ওই আসনে তৃণমূল জিতেছে। ধূপগুড়ির মানুষকে অনেক ধন্যবাদ। সারা দেশেই জোট ‘ইন্ডিয়া’ ভাল ফল করেছে।’’
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। তাঁর মৃত্যুতেই এই উপনির্বাচন। পাহাড় লাগোয়া ধূপগুড়ি বিধানসভায় লড়াই এ বার ত্রিমুখী। তিন জনই রায়। তিন জনই রাজবংশী। কারণ এই আসনের ভোটারদের বড় অংশই রাজবংশী। সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই বরাবর সব দল প্রার্থী দেয় এখানে। ১৯৭৭ সাল থেকেই বিধানসভায় রাজবংশী প্রতিনিধি পাঠিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার এই আসন।