স্বাধীন দেশ। গণতন্ত্রের শাসন রাজ্যে। আইন আছে। পুলিশ আছে। প্রশাসনও রয়েছে। আইন-আদালত, বিচার ব্যবস্থা সবই রয়েছে। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি গ্রামে পুরো উল্টো ঘটনা। সেখানে চলছে মাতব্বরি। পদে-পদে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। ঠিক যেন খাপ পঞ্চায়েতের শাসন।
দিন তিনেক আগে চক দ্বারিবেড়িয়া গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে খামে করে নোটিশ বিলি করে গ্রাম কমিটির সদস্যরা। যে সব বাড়িতে কেউ ছিলেন না সেখানে বাড়ির দেওয়ালে সাঁটিয়ে দেওয়া হয় নোটিশ। তাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, কোনও সমস্যা হলে সরসারি প্রশাসনে যাওয়া চলবে না, গ্রামকে জানাতে হবে। বাড়িতে কোনও মাঙ্গলিক বা অশৌচ কর্ম করার আগে গ্রাম কমিটির সঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে। গ্রামের কোনও ছেলে বা মেয়ে বাড়ির অমতে বিয়ে করলে তা গ্রাম কমিটিকে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে জরিমানা দিতে হবে। এছাড়া গ্রামের জমি কোনও মুসলিমকে বিক্রি করা যাবে না বলেও স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই নোটিশে।
আরও পড়ুন: GTA নির্বাচন নিয়ে মমতা তৎপর হতেই বেঁকে বসলেন বিমল গুরুং, জল্পনা বিজেপিতে যোগের
রীতিমত লিফলেট ছাপিয়ে বাড়ি-বাড়ি বিলি করা হয়েছে। এমনকী গ্রামের বাড়ির দেওয়াল গুলিতেও এই লিফলেট বিলি করা হয়েছে। নোটিশ আকারে সেগুলি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, গ্রাম কমিটির নামে দেওয়া এই ধরনের ফতোয়া আসলে তাঁদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
কতজন নিয়ে কমিটি গঠন হয়েছে?
চক দারিবেরিয়া গ্রাম কমিটি ১২ জনকে নিয়ে গঠিত হয়েছে। তার মধ্যে বাকি ৭ জনের নির্দেশ অমান্য করে এই ৫ জন সদস্য ১) শঙ্কর ঘোড়াই ২) সুভাষ ঘোড়াই ৩)তারক দাস ৪) বাপি সাউ ৫) প্রণব দাস এরাই এই নোটিশ বাড়ি-বাড়ি বিলি করেছে বলে অভিযোগ।
এক এলাকাবাসী বলেন, “গ্রাম কমিটি নির্দেশ দিয়েছে যে তাদের নির্দেশ মানতে হবে। কোনও থানা-পুলিশ করা চলবে না। তাদের শাসনে থাকতে হবে। আমরা ভারতে বাস করি। এই এলাকা দেশের থেকে তো আলাদা নয়, আমরা নিজেদের মৌলিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই।” আরও এক গ্রামবাসী বলেন, “আমরা পুলিশ স্টেশনে যাব। আইনের সাহায্য নেব। তারপর প্রশাসন যা সিদ্ধান্ত নেবে…”
ঘটনায় তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিরোধীরা। স্থানীয় বিজেপি নেতার দাবি, আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে গ্রামবাসীদের নিজেদের কাছাকাছি রাখতে এই নির্দেশ জারি করেছে তৃণমূল। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, এই ধরণের ফতোয়া আধুনিক যুগে চলে না। যারা এই কাজ করেছে তাদের খুঁজে বার করে পদক্ষেপ করুক পুলিশ।
আরও পড়ুন: Rampurhat Massacre: বগটুই-কাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে চাকরি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, নিয়োগপত্র পেলেন ১০ জন