তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে বাংলায় হিন্দুরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে গেছে, এই অভিযোগ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। রবিবার বিষ্ণুপুরের সভা থেকে তিনি দাবি করলেন, মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের চাপে পড়ে এখন সাধু-সন্তদেরও গালাগাল দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই কথা বলতে গিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নামেই অভিযোগ করেছেন মোদী।
শনিবার আরামবাগের সভা থেকে বড় অভিযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ভারত সেবাশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশনের একাংশ মহারাজ সরাসরি রাজনীতি করে দেশের সর্বনাশ করছেন। রবিবার মমতার সেই সমালোচনাই লুফে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন পুরুলিয়ার সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ইস্কন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ ও রামকৃষ্ণ মিশনকে হুমকি দিচ্ছেন। গোটা দুনিয়ায় তাঁদের ভক্তরা রয়েছেন। তাঁরা সেবার কাজ করে চলেছেন। কিন্তু বাংলার সরকার তাঁদের দিকে আঙুল তুলছে। তাদের নাম নিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এত সাহস!” মোদীর কথায়, “নিজের ভোট ব্যাঙ্ককে খুশি করতে তৃণমূলের তোষণের রাজনীতিতে এত নিচে নেমে গেছে। বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষের ভক্তি ও ভাবাবেগকে তারা পরোয়া করছে না”।
শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছিলেন, “সব সজ্জন সমান হয় না। সব সাধুও নয়। আমাদের মধ্যেই কি সবাই সমান আছেন? আমি আইডেনটিফাই করেছি বলেই বলছি।” এর পরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভারত সেবাশ্রমকে খুব শ্রদ্ধা করতাম। শ্রদ্ধার তালিকায় ওরা দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। বহরমপুরের একজন মহারাজ আছেন। কার্তিক মহারাজ। তিনি ওখানে বলছেন- তৃণমূলের এজেন্টকে বসতে দেব না। সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না, কারণ তিনি ডাইরেক্ট পলিটিক্স করে দেশটার সর্বনাশ করে দিচ্ছেন। আমি আইডেনটিফাই করেছি, কে কে করেছেন।” তারই পাল্টা এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভক্তিবেদান্ত প্রভুপাদ, স্বামী বিবেকানন্দ, প্রণবানন্দ মহারাজের অপমান এই দেশ সহ্য করবে না। যে সরকার এই বাংলার সংস্কৃতিকে সম্মান করে না, তাদের ভোটে সাজা দিন, যাতে আর ওরা সন্ত বা সাধুদের অপমান করতে না পারে”। প্রসঙ্গত, কার্তিক মহারাজ ওরফে স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের ট্রাস্টি সদস্য। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় সঙ্ঘের যে শাখা রয়েছে সেটিকে কেন্দ্র করে তিনি বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করেন। কলকাতায় ব্রিগেডে গীতাপাঠের অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ছিলেন তিনি।
বিষ্ণুপুরের সভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আরও বড় অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী। মমতাকে নিশানা করেই তাঁর সাফ কথা, ”মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম কট্টরপন্থীদের চাপে ভোট পেতে আমাদের সাধুদের এবং মহান সংগঠনগুলিকে গালিগালাজ করছেন। বদনাম করছেন। বাংলার সংস্কৃতির অপমান করছেন। পরিকল্পনা করেই হিন্দুদের ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা বলানো হয়েছে।” প্রসঙ্গত, তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবীরের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। তাঁর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ”৩০ শতাংশ লোক মসজিদ ভাঙলে মুর্শিদাবাদ জেলার ৭০ শতাংশ লোক বসে থাকবে না।” সেই প্রসঙ্গই এদিন ফের টেনে আনেন মোদী।
শনিবার মমতা শুধু রামকৃষ্ণ মিশন বা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকেই আক্রমণ করেননি। তাঁর মুখে কৃষ্ণ অনুগামীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসকনের কথাও আসে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কারা রাজনৈতিক ভাবে পক্ষপাতিত্ব করছেন, তাঁদের তিনি চিহ্নিত করেছেন বলেও দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি আইডেন্টিফাই করেছি কে কে করেছেন। আসানসোলে একটা রামকৃষ্ণ মিশন রয়েছে। আমি রামকৃষ্ণ মিশনকে কী হেল্প করিনি! সিপিএম যখন খাবার বন্ধ করে দিয়েছিল, আপনাদের অস্তিত্ব নিয়ে, স্বাধিকার নিয়ে… তখন কিন্তু আমি পুরো সমর্থন দিয়েছিলাম। মা-বোনেরা আসত। তারা তরকারি কেটে দিত। সিপিএম কিন্তু আপনাদের কাজ করতে দিত না।’’ এর পাশাপাশি মমতা বলেন, ‘‘ইসকনকে ৭০০ একর জমি দিয়েছি। ইসকনের একটি মিশন আর মন্দির আছে। দিল্লি থেকে নির্দেশ এসেছে, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো।’’
‘দিল্লির আজ্ঞাবহ’ হিসেবে মহারাজদের একাংশ কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে। বলে, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো। কেন করবে সাধুসন্তেরা এই কাজ? রামকৃষ্ণ মিশনকে সবাই সম্মান করে। ওদের কাছে একটা হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। ওদের যারা মেম্বার হয়, দীক্ষা নেয়, তারা আছে। তাদের আমি ভালবাসতে পারি। আমি দীক্ষা নিতে পারি। কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশন ভোট দেয় না কোনও দিনও। এটা আমি জানি। তা হলে আমি অন্যকে কেন ভোট দিতে বলব?’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘কেউ কেউ ভায়োলেট (লঙ্ঘন) করছে। সবাই নয়। কিন্তু মনে রাখবেন, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িটাই থাকত না, আপনাদের এই মেয়েটা যদি না থাকত।”