কাজে গাফিলতির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অগ্নিশর্মা চেহারা যখন প্রশাসনিক বৈঠকের মুডটাকে সম্পূর্ণভাবে থমথমে করে দিয়েছিল ঠিক তখনই খানিক স্বস্তি দিলেন তিনি নিজেই। ঝালদা পুরসভার পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের পেল্লাই ভুঁড়ি মোড় ঘোরালো সোমবার পুরুলিয়া শহরের রবীন্দ্র ভবনে প্রশাসনিক পর্যালোচনা সভার। আবার সেই চেনা মেজাজে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (WB CM Mamata Banerjee)।
রবিবার পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরসভা সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের জবাবে ঝালদার চেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়াল দাঁড়াতেই মুখ্যমন্ত্রীর চোখ ছানাবড়া। নিমেষে মমতা বলেন, ‘এই আপনার এত বড় ভুঁড়ি কেন?’
সাদা আদ্যির পাঞ্জাবি পরা সুরেশ প্রশ্ন শুনেই বলেন, ‘দিদি, না আমার সুগার আছে, না আমার প্রেশার আছে।’ অর্থাৎ তাঁর যে কোনও রোগ নেই সেটাই ‘দিদি’কে স্পষ্ট করে দেন ঝালদার চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যানের জবাব অবশ্য মনপসন্দ হয়নিমুখ্যমন্ত্রীর। পাল্টা মমতা বলেন, ‘ডেফিনেটলি কিছু তো আছেই। নিশ্চয়ই লিভারটা বড়। কিছু না থাকলে মধ্যপ্রদেশ এত বড় হয় কী করে?’
মুখ্যমন্ত্রীকে তুষ্ট করতে সপরেশ তখন বলেন, ‘দিদি আমি প্রতিদিন তিন ঘণ্টা ব্যায়াম করি।’
তখন মমতা জানতে ছান যে, ‘দেখান তো কী ব্যায়াম করেন’
সুরেশ ততক্ষণে শুরু কে দিয়েছেন ব্যায়াম। দেখা যায়, নাকের একদিক বন্ধ করে অন্যদিক দিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন ঝালদার চেয়ারম্যান। যা দেখেই মমতা বলেন, ‘এ তো আপনি প্রাণায়ম করছেন।’ এবার সুরেশ পেট নাচানোর কসরত করতে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে ততক্ষণে হাসি ধরেছে। তিনি বলেন, ‘এ তো কপালভাতি করছেন! কতবার করেন দিনে?’
সুরেশের সটান জবাব, ‘এক হাজার বার দিদি।’
পরখ করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক হাজার বার? হতেই পারে না। কই এখন করে দেখান তো দেখি।’ সুরেশ তখন অপ্রস্তুত। জানতে চাওয়ার ঢঙে বলেন, ‘দিদি, এখনই দেখাতে হবে?’ মমতা বলেন, ‘হ্যাঁ, স্টেজে এসে দেখান। এক হাজার বার এটা করতে পারলে আমি আপনাকে দশ হাজার টাকা দেব!’
ভরা দুপুরে সময়কে ঢাল করে তখন কোনও ক্রমে মমতার হাত থেকে বাঁচার তাগিদ সুরেশের। বলেন, ‘দিদি, এটা বিকেল পাঁচটার আগে করা যায় না!’
১২৫ কেজি ওজনের পুরপ্রধান কাঁচুমাচু মুখে বলেন, তেলের জিনিস বেশি খাওয়া হয়ে যায়। ছোট থেকে অভ্যাস। রোজ সকালে পাকোড়া তিনি খাবেনই। মুখ্যমন্ত্রী সটান কথা, ‘ও খেলে কোন দিন কমবে না এটা।’ তিনি দেখতে চান, কী কী ব্যয়াম করেন সুরেশ। সুরেশ ব্যয়াম দেখানোর পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি শ্বাস-নিশ্বাস টানেন না, শুধু ভুঁড়ি নাচান। কোনখান দিয়ে নিশ্বাস ছাড়তে হয়, কোনখান দিয়ে নিতে হয় সেটা আপনি জানেন না। কপালভাতি আমিও কিন্তু করি।’ এর পর সুরেশকে রাতে তাড়াতাড়ি খাওয়ার এবং দু’টি মিলের মধ্যে ১২ ঘণ্টা ব্যবধান রাখার পরামর্শ দেন মমতা।
আরও পড়ুন: ‘এক শতাংশ বলে কিছু হয় না’, অভিষেকের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ কলকাতা হাইকোর্টে