মঙ্গলবার বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারের হয়ে অশোকনগরে জনসভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রের মানুষজনের জন্য কী কী কাজ করেছেন তিনি, তুলে ধরলেন সেই পরিসংখ্যান। অনুকূল ঠাকুর, লোকনাথ, গুরুচাঁদ ঠাকুর-সহ হিন্দু ধর্মস্থানগুলির সংস্কার এবং উন্নয়নের জন্য কী কী কাজ করা হয়েছে, তা জানালেন মমতা। এ-ও জানালেন, তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণের মেয়ে। কিন্তু সেই পরিচয় দেন না। কারণ, তিনি নিজেকে মানুষ মনে করেন। আর এ ভাবেই খোঁচা দিলেন বিজেপিকে। সাধু-সন্তদের অপমান করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী কটাক্ষ করেছেন মমতাকে। মনে করা হচ্ছে, তারই জবাব দিলেন মমতা।
অন্যদিকে, ‘জগন্নাথ নিজে মোদীর ভক্ত’, এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে গেরুয়া শিবিরের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন ওডিশার পুরী কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সম্বিত পাত্র। আর এবার সম্বিতের সেই মন্তব্যকে ঘিরে নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কাকলী ঘোষ দস্তিদারের সমর্থনে জনসভা থেকে মমতা বলেন, ‘জগন্নাথদেবও নাকি ওঁর ভক্ত! ভগবানের থেকেও বড়। ভগবানের থেকে বড় হতে হলে আপনি মন্দিরে থাকুন, আমরা পুজো করব। ফুলচন্দন দেব, তুলসী পাতা দেব, ভালো করে সাজাব।’
প্রসঙ্গত, পুরীর মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর একটি সভা থেকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের চাবির সন্ধান কেন মিলছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নরেন্দ্র মোদী। সম্বিত পাত্রের সমর্থনেই ভোটের প্রচারে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিশাল রোড-শো শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সম্বিত পাত্র। সেই সময় তিনি বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য, জগন্নাথদেব নিজে মোদীর ভক্ত, আর আমরা সকলেই মোদীর পরিবার।’
মমতা বলেন, ‘‘বলছে বোমা ফাটাব। ২৬ হাজার লোকের চাকরি খেল। হাসছে। ভয়ঙ্কর। আমরা ১০ লক্ষ চাকরি নিয়ে রেডি। সঙ্গে জুটেছে সিপিএমের দু’-তিনটে অপদার্থ। আমরা করলে কিল, ওরা করলে পিল। মামলা করে সব আটকে দিচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মামলা লড়বে বলে কম টাকা নেয়নি। নির্লজ্জ। আজ আমি যদি কোর্টে দাঁড়াই, গরিব মানুষ বিপদে পড়লে, আমি কি টাকা নেব? যারা রাজনীতি করবে, এমপি, এমএলএ হবে, টাকা নিয়ে কেস করবে, চাকরিও আটকাবে? তাই এঁদের বিরুদ্ধে বলতে হবে, গলি গলি মে শোর হ্যায়… সিপিএম লুটেরা, ভুলবেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘ওঙ্কারনাথ মন্দির একটা তোরণ করতে চেয়েছিল। আমি তা-ও করে দিয়েছি। বেলুড়ে জেটি করে দিয়েছি। যে যেখানে বলেছেন। মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, থান, আমি ভেদাভেদ করি না। ওরা বলে হিন্দুধর্মে বিশ্বাস করি না। আমি জানি আমার নাম কে দিয়েছিল। পদবি কে দিয়েছিল। ভাগ্যিস হিন্দু ছিলাম। নয়তো বলত বিদেশ থেকে এসেছে। এনআরসি করে দিত। আমি কখনও বলি না, কিন্তু আমিও হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। মনে রাখবেন। কিন্তু পরিচয় দিই না। কারণ বিজেপির থেকে সার্টিফিকেট নেব না, যে আমি হিন্দু না মুসলিম। আমি মানুষ। বিজেপি নোংরা পার্টি। সঙ্গে জুটেছে সিপিএম।’’
কাকলির হয়ে ভোট প্রার্থনা করলেন মমতা। বললেন, ‘‘কাকলি আমার দীর্ঘ দিনের সহকর্মী। অসমে গিয়ে মার খেয়েছিল। এদের মতো মহিলা চাই, যারা এগিয়ে যাবে। লড়াই করবে। এক নম্বরে ভোট দেবেন। যখন যেখানে যেতে বলি, ও যায়। খুব ভাল সাংসদ। মিথ্যেবাদী নেতাদের ছোঁবেন না। ওরা ৪৪৪ ভোল্ট।’’