বিধানসভা ভোট হোক কিংবা পঞ্চায়েত ভোট, রাম নবমীতে বারংবার ‘অশান্তি’ নিয়ে এর আগেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এবছর লোকসভা ভোটের আগে ফের রামনবমী নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন মমতা।
বিজেপিকে নিশানা করে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দেশে কিন্তু খুব কঠিন অবস্থা চলছে। যেই নির্বাচন আসবে আবার একটা যুদ্ধ, যুদ্ধ খেলা করবে। দাঙ্গাও করতে পারে। ১৭ তারিখ ওদের অশান্তি করার দিন। ওরা চায় অশান্তি করে এনআইএ ঢুকিয়ে ভোট বানচাল করতে। হিংসার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, কেউ প্ররোচনায় পা দেবেন না। আমাদের শান্তি বজায় রাখতে হবে। আপনাদের এখানকার প্রার্থী একজন গুন্ডা, তিনি আবার আগুন লাগাবে। শীতলকুচির মতো গুলি চালিয়ে দেবে। ‘
রামনবমীকে ঘিরে মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা অবশ্য মিথ্যে নয়। গত কয়েক বছর ধরেই রামনবমীকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ। গতবছরই যেমন রামনবমীর মিছিল ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল হাওড়া। বিভিন্ন গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি, বারবার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার খবর এসেছে নৈহাটির হাজিনগর, হাওড়ার ধূলাগড়, হুগলির রিষড়া, ভদ্রেশ্বর, ডালখোলা থেকে। প্রতিটি জায়গাতেই কমপক্ষে দুই থেকে তিন দিন ধরে ব্যাপক অশান্তি চলেছে। আরও বেশ কিছুদিন বজায় ছিল চাপা উত্তেজনা।
আর, এই সব হিংসার সঙ্গেই উঠে এসেছে পুরোনো সাম্প্রদায়িক হানাহানির ঘটনার খবর। যেমন, উঠে এসেছে দেগঙ্গায় হানাহানির খবর। মুর্শিদাবাদ, মালদায়, উত্তরবঙ্গে হানাহানির খবর। যার সঙ্গে হাওড়ার শিবপুরের হানাহানি, ডালখোলার ঘটনা এবং অন্যান্য এলাকার ঘটনার উত্তেজনাকে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দেওয়া হয়েছে। আর, এসব হানাহানি নিয়ে আদালতে টানাপোড়েন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রিপোর্ট তলব, এনআইএ তদন্ত পর্যন্ত হয়েছে।
আর, এরপরই বারবার প্রশ্ন উঠে এসেছে এই সব সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জন্য দায়ী কে? গেরুয়া শিবির অভিযোগ করেছে, দায়ী রাজ্য সরকারের তোষণ। পালটা, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, এই সব উত্তেজনার পিছনে আসলে রয়েছে গেরুয়া শিবিরের উসকানি। দুই দলের সঙ্গে এই সব অভিযোগে তাল মিলিয়েছে তাদের সরকার এবং প্রশাসন। তৃণমূলের ক্ষেত্রে তাল মিলিয়েছে রাজ্য সরকার। বিজেপির সঙ্গে মিলিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এবারও ভোটমুখী বাংলায় রামনবমীকে কেন্দ্র করে রাজ্যে বিজেপি সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরির চেষ্টা করবে বলেই আশঙ্কা মমতার। আর তাই দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আগেও প্ররোচনায় পা না দেওয়ার সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন তিনি। পুরুলিয়ার প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোকে শান্তিমিছিল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। রামনবমীর ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগেও কোচবিহারের নির্বাচনী প্রচার সভা থেকেও একই সতর্কবার্তা জারি করলেন মমতা।