Municipality Polls Result: The Future Of Bengal BJP In Question

Bengal Bjp: ক্রমশ ফিকে হচ্ছে গেরুয়া, প্রশ্নের মুখে বঙ্গ বিজেপির ভবিষ্যৎ

একসময় বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখেছিল তাঁরা। স্লোগান উঠেছিল, ‘ইস বার, দোশো পার’। সেই স্বপ্ন যদিও দিনের আলো দেখেনি। কিন্তু বাংলায় বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে এক এবং একমাত্র উঠে এসেছিল বিজেপি। বাম ও কংগ্রেস শূন্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। তাই লড়াইটা হওয়ার কথা ছিল শাসক তৃণমূল বনাম বিরোধী বিজেপির মধ্যে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, বিজেপির অস্তিত্ব কার্যত সংকটে পড়ছে। আর ফের যেন বিরোধী পরিসরে ফিরে আসছে বামেরা। যা বজায় রইল পশ্চিমবঙ্গের ১০৮ পুরভোটের ফলাফলেও।

মাত্র দিন কয়েক আগেও দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কাঁচা বাঁশ দিয়ে ভোটে সন্ত্রাস করলে শাসকদলকে পেটানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। দিলীপের মতো বিজেপির আরও কয়েকজন রাজ্য নেতাও পুরভোট নিয়ে বড় বড় হুঙ্কার ছেড়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কোনও কথাই কাজে আসেনি। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যানের পথই বেছে নিয়েছে ।

বঙ্গের মোট ১০৮টি পুরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত রবিবার। দীর্ঘদিন আগে মোয়াদ উত্তীর্ণ হলেও করোনা কালে পুরসভাগুলিতে প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল এই পুরসভাগুলিতে। ভোটের দিন বেশ কিছু জায়গা থেকে উঠে আসে অশান্তির ছবি। সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয় বিজেপি। কিন্তু যেভাবে তাহেরপুরে বামেরা কিংবা দার্জিলিং হামরো পার্টি নিজেদের দখলে রাখল, সেখানে বিজেপি-র পতনের জন্য শুধুই কি সন্ত্রাসই দায়ী, প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

যে কাঁথিকে অধিকারী পরিবারের নিজস্ব সম্পত্তি বলে কোনও কোনও মহল থেকে প্রচার করা হত, সেই কাঁথিতেই দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। ওই পুরসভায় পরাজিত হয়েছেন বিজেপির বিধায়কও। বালুরঘাট বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হোমটাউন। সেখানেও ধরাশায়ী বিজেপি। পুরুলিয়া, বহরমপুর, রানাঘাট সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পুরভোটে পরাজিত হয়েছেন বিজেপির বিধায়করা।

যে দার্জিলিং নিয়ে এতদিন পাহাড়ে নিজেদের ক্ষমতার বড়াই করত বিজেপি, সেই দার্জিলিং পুরসভায় খাতাই খুলতে পারল না বিজেপি-জিএনএলএফ জোট৷ পাহাড়ের সাংসদ, বিধায়ক সবই বিজেপি-র। আর সেখানেই কিনা বিজেপি খাতাই খুলতে পারল না। ভাটপাড়ায় বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের প্রভাব বিলীন হয়ে গেল। ভাটপাড়া পুরসভা দখল করে নিল তৃণমূল। ভাটপাড়ার ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ আসনে প্রার্থীর মৃত্যুর জন্য ভোট হয়নি। কিন্তু ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টি ওয়ার্ড দখল করেছে তৃণমূল। দিনের শেষে ফলাফল পর্ব মিটলে রাজ্য জুড়ে এমন আরও অনেক নজির মিলবে।

এদিকে, ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু হতে-হতে ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বামেরা। তাহেরপুর পুরসভা দখল করাই শুধু নয়, বিধানসভা ভোটের পর থেকে যা ভোট হচ্ছে, সবেতেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসছে বামেরা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই যে প্রশ্নটি মাথাচাড়া দিচ্ছে, তাহলে কি ফের মুখোমুখি তৃণমূল ও বাম। বিজেপি কি ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে বঙ্গ রাজনীতিতে?

প্রশ্ন উঠেছে, পুরভোটেও চরম বিপর্যয়ের পর রাজ্যে বিজেপির ভবিষ্যৎ কী হবে। দলের অন্দরের খবর, এখন পর্যন্ত বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বিধানসভা ভোটে শোচনীয় পরাজয়ের পর্যালোচনা করে উঠতে পারেননি। দলের বিক্ষুব্ধ এবং সাসপেন্ডেড দুই নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারি প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিলেন, দলীয় বৈঠকে ওই প্রসঙ্গ তুলতেই দেওয়া হয়নি। বিধানসভার পর একাধিক উপ নির্বাচনে গোহারা হেরেছে দল। পাঁচ পুরনিগমের ভোটেও ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই ১০৮টি পুরসভার ভোটে শূন্য হাতেই ফিরতে হল মোদি-শাহের দলকে।