গ্রেফতার হতেই সন্দীপ ঘোষেরও একটি বাংলো বাড়ির হদিশ মিলল ক্যানিংয়ে। সবুজে ঘেরা সেই বাংলো বাড়ির নাম ‘সঙ্গীতা সন্দীপ ভিলা’। ঠিক যেমন পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হতেই শান্তিনিকেতনে খোঁজ মিলেছিল তাঁর বাগানবাড়ি ‘অপা’র। বান্ধবী অর্পিতার জন্যই সেই বাড়ি তৈরি করেছিলেন পার্থ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের খোঁজে তেমন তথ্যই উঠে এসেছিল। কিন্তু ফ্যামিলি ম্যান সন্দীপের বাংলোর সঙ্গে এখনও কোনও বান্ধবী যোগ মেলেনি।
ক্যানিং-২ ব্লকের ঘুটিয়ারি শরিফের নারায়ণপুর মৌজায় কয়েকশো বিঘা ফাঁকা জমির মাঝেই মাথা তুলেছে সবুজরঙা দোতলা একটি বাংলো। বাংলোর উপরে লেখা ‘সঙ্গীতাসন্দীপ ভিলা’। বাংলোটির চারদিকে রয়েছে লম্বা পাঁচিল। সন্দীপের স্ত্রীর নাম সঙ্গীতা ঘোষ। স্থানীয়দের বক্তব্য, স্ত্রী এবং নিজের নাম মিলিয়ে বাংলোটির নাম দিয়েছিলেন সন্দীপ। বাংলো এবং বাংলো সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে কয়েকশো বিঘা জমি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বেসরকারি সংস্থা কয়েকটি প্লটে বিভক্ত করে জমিগুলি বিক্রি করছে। ওই সংস্থাই দুই বিঘা জমির উপরে বাংলোটি তৈরি করেছিলেন, যেটি পরে কেনেন সন্দীপ। বাংলোর পাশে কয়েক বিঘা জমিতে খামারবাড়ি তৈরি করেছেন স্থানীয় কয়েক জন যুবক। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “বেশ কয়েক বছর আগে বাংলোটি তৈরি হয়। মাঝেমধ্যে ডাক্তারবাবুকে আসতে দেখেছি। শুনেছিলাম উনি কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ।”
সন্দীপকে সিবিআই গ্রেফাতারের পরে এখন বাড়ির কেয়ারটেকার এই জাকির লস্করের কাছেই রয়েছে বাড়ির চাবি। জাকিরের জানালেন, ছুটির দিনে সন্দীপ সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে এখানে আসতেন। আবার বিকালে বেরিয়ে যেতেন। পরিবারে সঙ্গে আসতেন বাবা, মা, শ্বশুর, শাশুড়ি। পরিবার ছাড়া অন্য আর কাউকে নিয়ে আসতে দেখেননি। জাকির জানান, এমনিতে তিনি চাষের কাজ করেন। একইসঙ্গে সন্দীপ ঘোষের বাংলোবাড়ির দেখাশোনাও করেন। প্রথমে ৫ হাজার টাকা বেতন পেতেন। পরে আরও ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে এখন ৭ হাজার টাকা দেন সন্দীপ। বললেন, “এ বাড়ির গেটের চাবিও আমার কাছে। তবে ভিতরের ঘরের চাবি নেই।”
শুক্রবার সন্দীপের সেই বাংলো বাড়িতে তল্লাশি চালাল ইডি। তাঁর আপ্ত সহায়ক বলে নিজেকে পরিচয় দেওয়া প্রসূন চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে সেই বাড়িতে পৌঁছন ইডি আধিকারিকরা। এদিন বিকেলে সেখানে পৌঁছয় ৮ জনের তদন্তকারী দল। বাংলো বাড়ির ৫০০-৬০০ মিটার দূর থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ঘিরে ফেলেন। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছেন আধিকারিকরা।
প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালে দুর্নীতির মামলায় গত সোমবার সিবিআই গ্রেফতার করেছে সন্দীপকে। আলিপুরের বিশেষ আদালত সন্দীপকে আট দিন সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। শুক্রবার সকালে সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে হানা দিয়ে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে ইডি। মনে করা হচ্ছে, আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তে এ বার নামতে চলছে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটিও।