বহরমপুরের ছাত্রী খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরীকে জেরা করে বহু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এখন সকলের বয়ান নিয়ে চার্জশিট পেশ করাই তদন্তকারীদের লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যে সুশান্তকে তার বাড়িতে নিয়ে গেলেও কোনও কথা বলতে চাইল না বহরমপুর ছাত্রী খুনে মূল অভিযুক্ত। সুশান্ত তদন্তকারীদের জানায়, তার কেউ নেই। কারও সঙ্গে বলার মতো কোনও কথাও তার নেই।
বৃহস্পতিবার রাতে সুশান্তকে নিয়ে মালদহের ইংরেজবাজারে পৌঁছন তদন্তকারীরা। যে দোকান থেকে সুশান্ত ছুরি ও খেলনা বন্দুক কিনেছিল, সেই দোকানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। দোকান মালিককে দীর্ঘক্ষণ জেরা করে পুলিশ।জানা গিয়েছে, নিজের প্রেমিকাকে খুন করার পরিকল্পনার ছক প্রায় দু’মাস আগে করে ফেলেছিল পুরাতন মালদা থানার বলরামপুর এলাকার কলেজ পড়ুয়া সুশান্ত চৌধুরী। তার জন্য মালদা শহরের রথবাড়ি এলাকায় একটি দোকান থেকে প্রায় ৬-৭ ইঞ্চির একটি ভোজালি আকারের ছুরি কিনছিল সে।
এরপর তাঁকে সুতপার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সুতপার বাবার সঙ্গে তদন্তকারীদের কথা হয়। এরপর সুশান্তকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর পিসির বাড়িতে। কিন্তু পিসির বাড়িতে গিয়ে কারও সঙ্গে দেখা হয়নি। অনেক ডাকাডাকির পর কারও আওয়াজ পাওয়া যায়নি। সুশান্ত তখন তদন্তকারীদের জানায়, তিনি কারও সঙ্গে দেখা করতে চান না। কাজ হয়ে গেলে তাঁকে যেন তাঁরা নিয়ে যান। এই সময় দুজন প্রতিবেশি কথা বলতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু সুশান্ত তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেননি। অন্য দিকে তাকিয়ে চলে যান। এরপর সুশান্তকে ইংরেজবাজারে নিয়ে আসা হয়। হোটেলে রাতের খাবার খাইয়ে তাঁকে ফের থানায় নিয়ে আসা হয়।
অন্যদিকে, সুশান্তর হয়ে মামলা লড়ার জন্য সুশান্তর বাবা নীহার চৌধুরী বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবি জয়দেব মণ্ডলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে যোগাযোগ করেন ফোনে। জয়দেব বলেন, “সুশান্তর বাবা নীহারবাবু কর্মসূত্রে শিলিগুড়িতে থাকেন। এ দিকের কিছু চেনেন না বলে আমাকে জানান ও ছেলের ওর হয়ে মামলা লড়তে অনুরোধ করেন। আমি সেই মতো প্রস্তুতি নিয়ে আদালতে গিয়েছিলাম।”
আরও পড়ুন: Cyclone Asani: শক্তি কিছুটা হারাল ‘অশনি’, তবে ভারী বৃষ্টিতে ভাসবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ
কিন্তু ওকালতনামায় সাক্ষরের জন্য আদালতে সুশান্তর বাড়ির লোক কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তখন আইনজীবী জয়দেব কোর্ট লকআপে সুশান্তর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁর জুনিয়র আইনজীবীর মাধ্যমে। সেই সময়ই তা প্রত্যাখ্যান করে সে। পরে বোঝানোর পর নিমরাজি হয়ে ওকালতনামায় সাক্ষর করে সুশান্ত। জয়দেব বলেন, “নিমরাজির কারণ জানতে সুশান্তর সঙ্গে আমি নিজে কথা বলি। তখনই সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় আমি চাই না আমার হয়ে কেউ মামলা লড়ুক। বিচারে জেল হলে হবে। প্রয়োজন হলে পরে কথা বলবো। বাড়ি থেকে বাবা মা যেন এখানে না আসে। আমি পরে তাঁদের সঙ্গে আপনার মাধ্যমে যোগাযোগ করে নেব।” তবে পুলিশের বিরুদ্ধে সুশান্তর কোনও অভিযোগ নেই বলেও জানিয়েছে সে।
দশ দিন আগে চলতি মাসের দু’তারিখ ভর সন্ধ্যায় বহরমপুর গার্লস কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মালদহের সুতপা চৌধুরীকে গোরাবাজার শহিদ সূর্য সেন রোডের পুরনো কাত্যায়নীর গলিতে নৃশংস ভাবে খুন করে মালদহেরই বাসিন্দা সুশান্ত। কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের অবনতির কারণেই এই খুন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: জেলে আত্মহত্যার চেষ্টা মামলায় দোষী সাব্যস্ত কুণাল ঘোষ, কী রায় দিল আদালত?