লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজ্যসভা ভোটের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস। বিশিষ্ট সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ, প্রাক্তন সাংসদ মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি মমতাবালা ঠাকুর, সুস্মিতা দেব এবং মহম্মদ নাদিমুল হককে প্রার্থী করা হয়েছে। যে চারটি আসনে জয় নিশ্চিত তৃণমূলের।
তালিকা দেখে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, রাজ্যসভা ভোটের জন্য প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করলেও আদতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে রয়েছে লোকসভা ভোট। সেক্ষেত্রে তিন ‘ম’ – মহিলা, মতুয়া এবং মুসলিম ভোটের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
মমতার রাজনীতিতে মহিলাদের গুরুত্ব দেওয়া নতুন কিছু নয়। লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে যে অনুপাতে মহিলা প্রার্থী রাখেন তিনি, দেশে তা বিরল। তবে রাজ্যসভায় তৃণমূলের মহিলা সাংসদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম ছিল। লোকসভায় তৃণমূলের সাংসদদের ৪২ শতাংশ মহিলা। বিধানসভায় তৃণমূল সদস্যদের ৩৩ শতাংশের বেশি মহিলা। সেখানে বর্তমান রাজ্যসভায় তৃণমূলের ১৩ জনের মধ্যে মাত্র দু’জন মহিলা। দোলা সেন ও মৌসম বেনজির নুর। সেই সংখ্যাই এ বার এক ধাক্কায় পাঁচে চলে যাবে, সব কিছু হিসাব মতো চললে।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে যে তৃণমূল জিতেছিল, তাতে মহিলা ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় ভূমিকা ছিল। আর নরেন্দ্র মোদীর মহিলা ভোটব্যাঙ্কও বেশ শক্তিশালী। সেই পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের দিকে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল ও বিজেপি। যা ইতিমধ্যে দু’দলের প্রচারে উঠে এসেছে। আর তারই অঙ্গ হিসেবে সংসদের উচ্চকক্ষে তিনজন মহিলাকে প্রার্থী করল ঘাসফুল শিবির।
দ্বিতীয় ‘ম’-র অঙ্ক হিসেব মমতাবালাকে প্রার্থী করে লোকসভা ভোটের আগে মতুয়া সমাজকে বড় বার্তা দিল তৃণমূল। ২০১৯ সালে মতুয়ারা পুরোপুরি বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। তার জেরে বনগাঁ, রানাঘাটের মতো জায়গায় দাঁড়াতেই পারেনি তৃণমূল। ফুটেছিল পদ্মফুল। কিন্তু যে আশায় বিজেপিকে উজাড় করে ভোট দিয়েছিলেন, তা পূরণ না হওয়ায় ২০২১ সালে মতুয়াদের কিছুটা মোহভঙ্গ হয়েছিল। তৃণমূলের ঝুলিতে ফিরেছিল মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক। এবার লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোটব্যাঙ্ক আরও মজবুত করতে মরিয়া তৃণমূল।
অন্যদিকে, তৃণমূলের চার বিদায়ী সাংসদের মধ্যে একমাত্র যাঁকে রাজ্যসভায় রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মমতা নিলেন, তিনি নাদিমুল হক। দলের অবাঙালি সংখ্যালঘু মুখ। রাজ্যসভায় এই নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। কলকাতা থেকে প্রকাশিত এক উর্দু দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদক নাদিমুল ২০১২ সাল থেকে তৃণমূলে হয়ে রাজ্যসভায় রয়েছেন। এত দিন শাসকদলের সাংসদ হলেও, তাঁকে নিয়ে কখনওই কোনও বির্তক দেখা দেয়নি। যা নিয়ে তাঁর উপর প্রসন্ন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সঙ্গে যখন তাঁকে যে দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে, সেই দায়িত্ব নীরবেই পালন করেছেন তিনি। প্রথম হজ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর কাজ সমাদৃত হয়েছে মুসলিম সমাজে। বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান। শনিবার থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে বইমেলা। সেই বইমেলায় মমতার লেখা বইগুলির উর্দু অনুবাদ বিক্রি হচ্ছে নাদিমুলের উদ্যোগেই।
এ বারের রাজ্যসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের মোট ৫টি আসনে ভোট হচ্ছে। তারই চারটি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল। একটি আসনে প্রার্থী দেবে বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। প্রত্যেক প্রার্থীকে ৪৯টি করে ভোট পেতে হবে। যদি এই নির্বাচনে পাঁচজনের বেশি প্রার্থী হলে তবেই ভোট হবে। তৃণমূল ও বিজেপি কোনওপক্ষই অতিরিক্ত প্রার্থী দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচজনের প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।