হাতে সিগারেট, মুখে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি। আর বেসুরোভাবে তামাশার ছলে গাইছেন জাতীয় সংগীত জনগণমন। কখনও একে অপরের উপরে হাসিতে ঢলে পড়ছেন, আবার কখনও জলন্ত সিগারেটকে পতাকা বলে মজা করছেন। সঙ্গে রয়েছে জাতীয় সংগীতের বিকৃত উচ্চারণ, ভুলভাল শব্দ। সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে দুই কিশোরীর এমনই এক কীর্তির ভিডিয়ো। যা দেখে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ সকলের। আর যার জন্য বেশ বিপাকেও পড়েছেন দুই স্কুল ছাত্রী।
জাতীয় সংগীতের অবমাননার জন্য ইতিমধ্যেই তাঁদের বিরুদ্ধে লালবাজার সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দায়ের করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী আত্রেয়ী হালদার। আইনজীবী জানিয়েছেন, “৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রথম ভিডিওটি দেখি।” তা দেখে বিস্মিত আইনজীবী। তাঁর কথায়, শুধু জাতীয় সংগীত নয়, ভিডিওটিতে জাতীয় পতাকারও অবমাননা করা হয়েছে। একটি সিগারেট তুলে একজন কিশোরী বলছে এটা দেশের জাতীয় পতাকা! এ দেশের কোনও নাগরিক জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতের অপমান করতে পারে না। দ্রুত লালবাজার সাইবার ক্রাইম আর বারাকপুর সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করা হয়। কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাইবার) অতুল ভি বলেন, “আমরা ই-মেলে অভিযোগ পেয়েছি। ফেসবুককে চিঠি লিখে কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এরপর অভিযুক্তদের শনাক্তকরণ করা হবে। সেইমতো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।”
আরও পড়ুন: AMRI Hospital: বিক্রির মুখে আমরি হাসপাতাল, 2400 কোটিতে ফাইনাল ডিল
কারা তারা? জানা গিয়েছে, নাবালিকা দু’জনেই দমদমের বাসিন্দা। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তদন্তে জানা গিয়েছে, দুই কিশোরীর একজন পড়ে দমদম রোড গর্ভমেন্ট স্পনসর্ড হাইস্কুলে। অন্যজন দমদম কুমার আশুতোষ ইন্সটিটিউশনের ছাত্রী। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে পড়ে শুক্রবার দুপুরে নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইল মুছে দিতে বাধ্য হয় দুই কিশোরী। বদলে অন্য এক সামাজিক মাধ্যম থেকে লাইভ করে একজন জানায়, ‘মজা’র ছলে তোলা ওই ভিডিও যে ভাইরাল হয়ে এমন বিপদ ডেকে আনবে সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি তারা।
এক কিশোরীর দাবি, বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরা হয়েছিল। বেপরোয়া কোনও কাজ করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই ওই ভিডিও। যদিও আইন বলছে এমন মশকরার জন্য বিপাকে পড়তে পারেন দুই কিশোরী। আইনজীবী অরিন্দম দাস জানিয়েছেন, প্রিভেনশন অফ ইনসাল্ট টু ন্যাশনাল অনার অ্যাক্ট ১৯৭১ অনুযায়ী জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় কোনওরকম পরিহাস বরদাস্ত নয়। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় সংগীতের কোনওরকম অদলবদল ঘটান, শব্দ উলটোপালটা গান, তাহলে ওই ব্যক্তির ৩ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। হতে পারে মোটা জরিমানাও। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
আরও পড়ুন: DA Showcause : প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শোকজ, নজিরবিহীন ঘটনা বাংলায়