প্রখর তাপপ্রবাহ ও অসহনীয় গরমের জেরে সৌদি আরবের মক্কায় চলতি বছরের হজে মৃত্যু হয়েছে ৫৭৭ জনেরও বেশি হজযাত্রীর। মৃতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মিসর থেকে আসা হজযাত্রী— ৩২৩ জন। এর বাইরে মৃতদের তালিকায় জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং সেনেগালের হজযাত্রীরাও রয়েছেন।
মক্কার বৃহত্তম হাসপাতাল আল মুয়াইসেমের মর্গে সব মৃতদের লাশ রাখা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, মৃত হজযাত্রীদের মধ্যে ৫৭৫ জনই মারা গেছেন হিটস্ট্রোক ও গরমজনিত অন্যান্য শারীরিক সমস্যায়। বাকি ২ জন মারা গেছেন পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে।
উষ্ণ মরু জলবায়ুর দেশ সৌদি আরবে গ্রীষ্মকালে গড় তাপামাত্রা থাকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। গত কয়েক দিন ধরে দেশটির দৈনিক তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার মক্কার তাপমাত্রা ছিল ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও তার জেরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত নয় সৌদিও। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি এক দশকে সৌদি আরবের তাপমাত্রা বাড়ছে দশমিক ৪ ডিগ্রি করে।
হজ মৌসুমে সৌদিতে বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ হজযাত্রীর সমাগম ঘটে। এই হজযাত্রীদের সবাই যে যথাযথ নিয়ম-বিধি মেনে দেশটিতে প্রবেশ করেন— এমন নয়। হাজার হাজার যাত্রী দেশটিতে প্রবেশ করেন বৈধ কাগজপত্র বা নথিপত্র ছাড়াই। প্রত্যেক বছরই এমন ঘটে। ফলে, বৈধ হজযাত্রীদের জন্য সৌদির সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা ও পরিষেবা বরাদ্দ করেছে, সেসবের প্রায় কিছুই তারা পান না। এমনকি শীতাতম নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতেও তাদের প্রবেশাধিকার নেই।
ফলে ভয়াবহ গরম থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাবই অনেক হজযাত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘যে হজযাত্রীরা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই যথাযথ নিয়ম-বিধি মেনে সৌদিতে প্রবেশ করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে তারা খাবার, পানি ও এয়ার কন্ডিশন পরিষেবা পাননি। মূলত এটিই তাদের অসুস্থতা ও তার পরবর্তীতে মৃত্যুর জন্য দায়ী।’
গত বছর হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ২৪০ জন হজযাত্রী মারা গিয়েছিলেন। এবার মৃত্যু হলো তার দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক যাত্রীর।সৌদির সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, এর আগে এক মৌসুমে এত বেশি সংখ্যক হজযাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি।