শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। সেই সরকারের প্রধান হয়েছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস। তিনি এবার নরেন্দ্র মোদীকে দ্রুত ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানালেন।
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। ৮ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ইউনূস। তৃতীয় ভয়েস অব গ্লেবাল সাউথ সামিটে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ইউনূস বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন যে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ একটি ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’র সাক্ষী হয়েছে। আমাদের বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে যা সম্ভব হয়েছে। আপনাদের দ্রুত ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। নয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করতে পারেন। ঢাকার অনেকটা অংশ পরিণত হয়েছে বিশ্বের গ্রাফিতি রাজধানীতে। তরুণ শিক্ষার্থী ও ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা ৪০০ বছরের পুরোনো এই শহরের দেওয়ালে নতুন গণতান্ত্রিক পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশের চিত্র দিয়ে রাঙিয়ে তুলছে। এজন্য কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনা নেই। কারও কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট পায়নি তারা। এটা দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্যের প্রতি তাদের আবেগ ও অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তারা রং এবং ব্রাশ কেনার জন্য দোকানে যান। তারা তাদের নিজস্ব বিষয় এবং নিজস্ব বার্তা তৈরি করে। তারা যে বার্তা আঁকছে তা যে কাউকে শিহরিত করবে। তরুণদের স্বপ্ন সত্যি করাই আমাদের কাজ।’
এখন তাঁরা সেখানে কী করতে চাইছেন সেটাও জানিয়েছেন ইউনূস। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে সবাইকে নিয়ে চলার মতন একটি বহুত্ববাদী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং অবাধ, স্বচ্ছ ভোট হাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচারবিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম, অর্থনীতি এবং শিক্ষায় জরুরি সংস্কার করা।’
ড. ইউনূস মনে করেন, ‘গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ ও শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সরকারের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ। এরা সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ। তারা আলাদা। তারা একটি নতুন বিশ্ব গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তরুণ ও শিক্ষার্থীরা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে তারা আগের প্রজন্মের চেয়ে অনেক এগিয়ে।’ সেই সময়েই মোদীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান ইউনূস। তবে মোদী সেখানে যাবেন কীনা সেটা এখনও জানানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে, বাংলাদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের অবস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপরেই তাঁকে ফোন করেন ইউনূস। মোদী জানান, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নশীল বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন করার কথাও জানান মোদী। অন্যদিকে বাংলাদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন ইউনূস।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ইউনূস মোদীকে বলেন যে সেখানে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে। ভারতের সাংবাদিকদেরকেও সেখানে গিয়ে পরস্থিতি সরজমিনে দেখার কথাও বলেছেন ইউনূস।