রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে, শতাধিক প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশে (Bangladesh) বদলে গেল সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ! হাই কোর্টের রায় খারিজ করে কোটা সংস্কারের পক্ষেই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশে এবার থেকে ৯৩ শতাংশ আসনে নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। কেবল ৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষালয়গুলিতে ফিরতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, সে দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন। তবে আগের মতো ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ আর পাচ্ছেন না তাঁরা। ৩০ শতাংশ থেকে কমে মুক্তিযোদ্ধা-সংরক্ষণ করা হয়েছে পাঁচ শতাংশ। অর্থাৎ, এখন থেকে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কেবল পাঁচ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য।
সাত শতাংশের মধ্যে বাকি দুই শতাংশ সংরক্ষণ থাকছে অন্যান্য শ্রেণির জন্য। অনগ্রসর শ্রেণি পাচ্ছে এক শতাংশ কোটা। এ ছাড়া বাকি এক শতাংশ কোটার সুবিধা পাবেন প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকেরা।
১৯৭১ এ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। এক বছর পর ১৯৭২ থেকে সংরক্ষণ চালু হয়। শুরুতে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হয়। বাকি ৪৪ শতাংশে নিয়োগ হত মেধার ভিত্তিতে। সংরক্ষণ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের। ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণের মধ্যে ৩০ শতাংশই ছিল তাঁদের জন্য। এছাড়া মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল সরকার চাকরিতে। পুরনো এই সংরক্ষণ পদ্ধতির বিরোধিতায় আন্দোলন শুরু হয় ২০১৮ সালে।
আন্দোলনের দাবির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। অর্থাৎ সংরক্ষণ রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ। কিন্তু গোল বাধান সাত জন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। ২০২১ সালে তাঁরা সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় হাই কোর্টে মামলা করেন। এর পর গত ৫ জুন উচ্চ আদালত জানায়, সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ। ফলে ফিরে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জুড়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে যা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশের বাধা এবং সংঘর্ষে ১৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
হাই কোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আগেই গিয়েছিল হাসিনা সরকার। আগামী ৭ অগস্ট তার শুনানির কথা ছিল। দেশের ক্রমবর্ধমান অশান্তির আবহে শুনানি এগিয়ে আনা হয়। রবিবার সেই শুনানি হল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। রায় অনুযায়ী দ্রুত সরকারকে বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।