হরিদ্বারের ‘ধর্মসভা’য় বিদ্বেষমূলক মন্তব্যকে হাতিয়ার করে এবার আসরে পাকিস্তান।এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন সেদেশের খোদ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেছেন, এ দেশের শাসক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিশানা করে প্রবোধানন্দ গিরি যা বলেছেন তা আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় বড় বাধা।
হরিদ্বারের বিদ্বেষমূলক ভাষণ ইস্যুতে মোদী সরকারের ‘চলতে থাকা নীরবতা’ নিয় প্রশ্ন তোলেন ইমরান খান। নিজের টুইটে তিনি ডিসেম্বর মাসে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে বিদ্বেষমূলক বার্তার প্রসঙ্গ তোলেন ইমরান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুসলিম জনবসতি নিয়ে। তাঁর টুইট বার্তায় উঠে আসে ভারতীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার প্রশ্নও। হরিদ্বারের এই গোটা ইস্যুতে মোদী সরকারের পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন তুলতে ছাড়েননি ইমরান খান।
ভারতে সংখ্যালঘুরা বিপন্ন। এই অভিযোগ আগেও তুলেছিলেন ইমরান খান। এবার টুইটে ইমরান লিখেছেন যে, ‘ভারতে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে ২০ লক্ষ মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশ্বেষ করার ডাক দিয়েছে চরমপন্থী এক হিন্দু সংগঠন। এরপরও নীরব মোদী সরকার। তাদের এই নীরবতা গণহত্যার ওই আহ্বানকে সমর্থন করে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আন্তর্জাতিক মহলের উপযুক্ত পদক্ষেপের এটাই সেরা সময়।’
ইমরান নিজের টুইটে বিজেপি সরকারের ‘আদর্শ’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। লেখেন ‘বিজেপি সরকারের চরমপন্থী আদর্শ রয়েছে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এই উস্কানির নেপথ্যে।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই ইস্যুতে নিজের টুইটে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আবেদন করেন, যাতে তাঁরাও এই ইস্যুটি নিয়ে সরব হয়। আরও একটি পোস্টে সরাসরি ভারতের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ইমরান খান লেখেন, ‘মোদী সরকারের চরমপন্থা বর্তমানে আমাদের এলাকার শান্তিকে ভঙ্গ করছে।’
গত ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হরিদ্বারে একটি রুদ্ধদ্বার ধর্মসংসদের আয়োজন করা হয়। যার মূল আয়োজক ছিলেন বিতর্কিত ধর্মগুরু যতি নরসিংহনন্দ। বিতর্কিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু রক্ষা সেনার প্রবোধানন্দ গিরি, বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী উদিতা ত্যাগী এবং বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়। ভাইরাল একটি ক্লিপে দেখা যায় প্রবোধানন্দ গিরি বলছেন, ‘মায়ানমারের মতো আমাদের পুলিশ, সেনা, রাজনীতিবিদ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষকে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হবে। সাফাই অভিযান চালাতে হবে।’ অন্য একটি ক্লিপে পূজা শাকুন পান্ডে বলেন, ‘যদি ওদের সমূলে ধ্বংস করতে চান, তাহলে ওদের হত্যা করুন। আমরা এমন ১০০ জন যোদ্ধাকে চাই, যারা ওদের ২০ লাখ লোককে হত্যা করবে।’
আরও বেশ কয়েকজন ধর্মগুরু ওই সমাবেশ থেকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিভিন্নরকম উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। এই বিদ্ভেষমূলক মন্তব্য ঘিরে ভারতে শোরগোল পড়ে যায়। ১৫ জনের বিরুদ্ধে এইআইআর হয়েছে। তালিকায় নাম রয়েছে, জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী, যতি নরসিংহনন্দ ও গাজিয়াবাদের দশনা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত।
ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের সিট গঠন হয়েছে। দেশের শীর্ষ আদালতের ৭৬ জন সিনিয়ার আইনজীবী এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজুর আবেদন করেন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে হরিদ্বারের ঘৃণ্য মন্তব্যের ক্ষেত্রে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে রাজি হয়েছে।