আলু এবং পেঁয়াজ আমদানির জন্য শুধু ভারতের উপর আর নির্ভর করতে রাজি নয় বাংলাদেশ। আমদানির জন্য বিকল্প দেশের সন্ধান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ছ’টি দেশ চিহ্নিতও করেছে ফেলেছে ঢাকা। তবে এখনও সে সব দেশ থেকে আলু বা পেঁয়াজ কেনার বিষয়ে পাকাপাকি কথা হয়নি। আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) আলু এবং পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ভারত বাদে বিকল্প ছ’টি দেশের কথা জানিয়ে সে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রকে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কেন এই দুই পণ্যের ক্ষেত্রে বিকল্প দেশের প্রয়োজন, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টটি নিয়ে ঢাকায় আলু এবং পেঁয়াজের আমদানি এবং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মূলত আলু কেনে ভারতের থেকেই। বিটিটিসি-র প্রতিবেদনে আলু আমদানির জন্য ভারতের বাইরে আরও চারটি দেশের নাম করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে চিনও। জার্মানি, মিশর, চিন এবং স্পেন থেকে আলু আমদানির কথা ভাবছে বাংলাদেশ। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের মূল ভরসা ভারত। তবে চিন, তুরস্ক এবং পাকিস্তান থেকে কিছু পেঁয়াজ কিনে থাকে ঢাকা। বিটিটিসি-র প্রতিবেদনে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ওই তিন দেশের নামই করা হয়েছে।
কদিন আগে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন ঠিকই, তবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়বে না। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে আলু, পেঁয়াজ, চাল, জল পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ার পথে হাঁটতে চায় না ভারত (India Bangladesh trade)। যদিও কদিন আগে পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুমকি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন বন্ধ না হলে এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি না হলে ভারত থেকে পেঁয়াজ ও আলু রফতানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তা নিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী আর বাংলাদেশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় তর্কও বেঁধেছে বিস্তর।
এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত নির্ভরতা তারা কমাতে চাইছে বলে পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন। বাংলাদেশ অবশ্য সে কথা স্বীকার করেনি। ঢাকার আধিকারিকদের মতে, ভারতে আলু এবং পেঁয়াজের দাম গত কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী। সে দিকে নজর রাখা হয়েছে। এ সব ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত রফতানিতে রাশ টানা হয়ে থাকে। সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই তাই বিকল্প খুঁজতে চাইছে বাংলাদেশ। বিটিটিসির চেয়ারম্যান মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দিনে ৪০ থেকে ৫০টি পেঁয়াজের ট্রাক আসত। এখন তা অনেক কমে গিয়েছে। ১০ থেকে ১২টি ট্রাকে পেঁয়াজ আসছে। আলু-পেঁয়াজ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। এর জন্য একটি বা দু’টি উৎস ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমরা বিকল্প পথ খুঁজছি।’’