পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে ইমরান খানের স্থায়িত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র সংশয়। পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইতিমধ্যেই ইমরানের বিরুদ্ধে পেশ হয়েছে অনাস্থা প্রস্তাব। সংখ্যার নিরিখে ইমরানের গদি বাঁচানোর কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না পাক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নিজের দলেরই সদস্যরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন ইমরানের বিরুদ্ধে। শরিকরা ইমরানকে ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন বিরোধীদের দলে। এই আবহে ইমরান খান অভিযোগ করেছিলেন যে ‘বিদেশি শক্তি’ তাঁর সরকারের পতনের জন্য কলকাঠি নাড়ছে। তাঁর ইঙ্গিত ছিল আমেরিকার দিকে।
ইসলামাবাদের জনসভা থেকে তিনি বলেন, ‘বিদেশি অর্থের মাধ্যমে পাকিস্তানে সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তিনি আরও দাবি করেছিলেন যে তাঁর কাছে এর প্রমাণস্বরূপ একটি চিঠিও আছে। যদিও ইমরানের এই অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিল আমেরিকা। পরে অবশ্য সেই চিঠি ইমরান খান প্রকাশ করেননি। তবে আমেরিকার নাম না করে তিনি কয়েকজন সাংবাদিককে বলেন, ‘আমার মস্কো সফর ও বিদেশ নীতি নিয়ে আপত্তি আছে একটি দেশের। সেই দেশের তরফে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে এই বিষয়ে চিঠি লেখা হয়েছিল।’ ইমরান খান জানান, সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের তরফে এই চিঠিটি কেবল করা হয় অনাস্থা প্রস্তাব পেশের পরদিন।
বুধবার হাইকোর্ট এক রায়ে পাক প্রধানমন্ত্রীকে চিঠির গোপন বিষয়বস্তু (‘Secret’ Letter) প্রকাশ্যে আনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, হাইকোর্টের এই রায় ইমরানের কাছে বিরাট ধাক্কা। পাক প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে ইমরানের সেই চেষ্টা ভেস্তে দিল আদালতের এই রায়।
আরও পড়ুন: Russia Ukraine War: রাশিয়ায় হু হু বিকোচ্ছে কন্ডোম! কেন হঠাৎ বাড়ছে চাহিদা?
এর আগে বিভিন্ন বিদেশি সংবাদসংস্থা তাদের সংবাদে জানিয়েছিল, ইমরান খান যে চিঠির কথা বলছেন, সেটি একটি অভ্যন্তরীণ কথা চালাচালির নির্যাস। ওই চিঠিটি সম্ভবত পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেছিলেন আমেরিকার বিদেশমন্ত্রককে। এমনটাই জানাচ্ছে সংবাদসংস্থাগুলি। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট মেনে চলতে বাধ্য।
সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেই ইমরান খান মস্কো সফরে গিয়েছিলেন। ইমরানের অভিযোগ, আমেরিকা তাঁর সেই রাশিয়া সফর মেনে নিতে পারেনি। আর তাই তাঁর সরকারের পতন ঘটতে চাইছে। এই চক্রান্তের ব্যাপারে মার্কিন বিদেশ দফতরের এক কর্তাকে প্রশ্ন করা হয়, ইমরান খানের সরকার ফেলতে আমেরিকা পাকিস্তানের প্রাক্তন এক দূতকে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে। অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়ে মুখপাত্রটি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ গুজব। পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করার কোনও অভিপ্রায় আমেরিকার নেই।’
এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বাইডেন প্রশাসন থেকে বিশেষ চিঠি পাঠানো হয় রাষ্ট্রদূত আসাদ মাসুদকে। কিছুদিন আগে মাসুদের সঙ্গে বৈঠক করেন আমেরিকার দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া দফতরের সহকারি বিদেশ সচিব ডোন্যাল্ড লু। ঘটনাচক্রে এই বৈঠকের পরে পরেই শাসকদলের ওপর থেকে এক শরিকদল সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। যার ফলে ইমরান সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: Imran Khan: ইমরান খানকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে! অভিযোগ ঘিরে তুলকালাম পাকিস্তানে