ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়া এবং কোভিড প্রোটোকল লঙ্ঘন করে তাঁর বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের গার্ডেনে পার্টি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রধান ব্যক্তিগত সচিব মার্টিন রেনল্ডস ২০২০ সালে ডাউনিং স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত একটি পার্টির জন্য বেশ কয়েকজনকে আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। সেইসময় ওই দেশে করোনার জেরে জনসমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
কে এই ঋষি সুনাক? তাঁর মা ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট। আর বাবা, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (NHS) একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান। বাবা-মা দুজনেই ভারতীয় হলেও, ঋষির জন্ম যুক্তরাজ্যেই (United Kingdom)। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Stanford University) স্নাতক, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Oxford University) স্নাতোকোত্তর। মায়ের ছোট্ট কেমিস্টের দোকানে কাজ করা থেকে শুরু করে, ঋষি সুনাক নিজের হাতে একটি ১০০ কোটি পাউন্ড অর্থমূল্যের বৈশ্বিক বিনিয়োগ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর স্ত্রী, ‘ইনফোসিস’ সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির কন্যা অক্ষতা মূর্তি। কৃষ্ণা এবং অনুষ্কা নামে দুই মেয়ে রয়েছে তাঁদের।
ব্যবসায় সফল হওয়ার পর, ২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের (Yorkshire) রিচমন্ডের (Richmond) সংসদ হিসাবে তিনি প্রথম ব্রিটিশ সংসদে প্রবেশ করেছিলেন। আর মাত্র ৬ বছরের মধ্য়েই টোরি পার্টিতে একজন কট্টর ব্রেক্সিট (Brexit) সমর্থক হিসেবে দ্রুত উত্থান ঘটেছে তাঁর। প্রধানমন্ত্রীর পদের পরই ব্রিটিশ কোষাগারের চ্যান্সেলর, যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসাবে এই ঐতিহ্যশালী পদে আসীন হয়ে এমনিতেই তিনি নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন। এবার, ৪১ বছরের এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে বসে আরও এক নতুন ইতিহাস লিখবেন, এমনটাই বলছে ব্রিটিশ বুকিদের বাজির দর।
আরও পড়ুন: লাদাখের প্যাংগং লেকে সেতু বানিয়েছে চীন, স্বীকার করল মোদী সরকার
ঋষি সুনাক এবং তার স্ত্রী অক্ষতার বিলাস বহুল জীবনযাত্রা নিয়ে সমালোচনা হলেও, একজন আদ্যন্ত পারিবারিক মানুষ হিসেবে ঋষির ভাবমূর্তি ব্রিটিশ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার আগে, ঋষি তাঁর মেয়েদের তৈরি ব্রেসলেট পরেন। প্রায়শই নিজেকে ‘গর্বিত হিন্দু’ হিসাবেও জাহির করে থাকেন তিনি। গত নভেম্বর মাসে দীপাবলির দিন মহাত্মা গান্ধীর জীবন স্মরণে একটি নতুন ৫-পাউন্ডের স্মারক মুদ্রা উন্মোচনের সময়ও তাঁকে সেই ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল।
এর আগে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর বিষয়ে চরম অনাগ্রহ দেখিয়েছিলেন ঋষি। তবে, ব্রিটিশ রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বর্তমানে পার্টির মধ্যেই বিদ্রোহের মুখে পড়া ৫৭ বছর বয়সী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সমর্থনে এর আগে যতটা দৃঢ়ভাবে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিতেন ঋষি, বর্তমানে ততটাও দেখা যাচ্ছে না। সমর্থন তিনি করে যাচ্ছেন, তবে, তাতে যেন মন নেই। অনেকেই মনে করছেন, এটা তাঁর নিজের নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিস বাড়িটির ঠিকানা ১০ ডাউনিং স্ট্রিট। চ্যান্সেলরের অফিস ঠিক তার পাশের বাড়িটিতেই, ১১ ডাউনিং স্ট্রিট। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে এখন দারুণ জল্পনা, ঋষি সুনাকের বাড়ি বদলে পাশের বাড়িতে আসাটা, এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: আমাজন -এর মাল বোঝাই ট্রেন লুটে নিল ডাকাতরা! লাইনেই ছড়াল ফাঁকা বাক্স, দেখুন ভিডিও