অবশেষে বিদ্রোহীরা প্রবেশ করল সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে। তাদের ঘোষণা ‘যুগের অবসান’। তার পরই দ্রুত শহর ছাড়লেন সেদেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এ হেন পরিস্থিতিতে দেশের রাশ বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত সিরিয়ার সরকার, এমন জানালেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজ়ি জালালি। তবে তিনি চান, বিষয়টি শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হোক!
গত কয়েক দিনে সিরিয়ার একের পর এক শহর দখল করছেন বিদ্রোহীরা। রবিবার সকালেই রাজধানীতে ঢুকে পড়েন বিদ্রোহীরা। বিভিন্ন সরকারি ভবনের দখল নেওয়া শুরু করেছেন। শনিবার রাত থেকেই দামাস্কাস ঘিরে ফেলার কাজ শুরু করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তাদের আগ্রাসনের সামনে পিছু হটতে শুরু করে সিরিয়া সেনা। বিদ্রোহীদের দখলে দামাস্কাস আসতেই ‘বেপাত্তা’ প্রেসিডেন্ট আসাদ। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকেরা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বিমানে উঠেছেন। তবে গন্তব্য কোথায় সে ব্যাপারে নিশ্চিত কোনও খবর মেলেনি।
প্রেসিডেন্ট দেশছাড়া, রাজধানীর বুকে দাপাচ্ছেন বিদ্রোহীরা— এমন অবস্থায় একটি ভিডিয়োবার্তা প্রকাশ করে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা জানিয়েছেনপ্রধানমন্ত্রী জালালি। সংবাদ সংস্থা এপি সূত্রে খবর,তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার বাড়িতেই আছি। আমি কোথাও পালাইনি। কারণ এটা আমার দেশ।’’ জালালি আরও জানান, রোজকার মতো সকালে তিনি নিজের অফিসে যাবেন। কাজকর্ম সারবেন। পাশাপাশি সরকারি সম্পত্তি নষ্ট না করার আহ্বানও জানিয়েছেন জালালি।
সিরিয়ার বিদ্রোহী দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী আগ্রাসনে পিছু হটেছে আসাদের সরকার। উল্লেখ্য, ২০০০ সাল থেকেই সিরিয়া শাসন করছেন আসাদ। তবে জলঘোলা হতে শুরু করে ২০১১ সালে। আরব বসন্তের হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মরুপ্রদেশটি। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে একনায়ক হঠাও, গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে। শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। আসাদকে গদিচ্যুত করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিদ্রোহীদের যৌথমঞ্চ ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)। কুর্দ বাহিনী পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নেতৃত্বে আরম্ভ হয় এক অসম যুদ্ধ। শুরুর দিকে লড়াইয়ে আলেপ্পো হাতছাড়া হলেও, ২০১৬ সালে তা পুনরোদ্ধার করে আসাদ বাহিনী। পাশাপাশি, ইরান ও রাশিয়ার মদতে বিদ্রোহীদেরও কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। তবে সময়ের সঙ্গে মার্কিন ও পশ্চিমের দেশগুলির মদতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে জবরদস্ত পালটা মার দিতে শুরু করে বিদ্রোহীরা। সবমিলিয়ে. রাশিয়া, আমেরিকা, ইরানের মতো শক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের খেলায় বোড়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিয়া।