বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিকের (Titanic) ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে তার মতোই পরিণতি হল সাবমেরিনের। মার্কিন নৌসেনা (USA Cost Guard) সূত্রে জানা গিয়েছে, জলের তলায় ডুব দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সাবমেরিনটি ভেঙে পড়ে। মৃত্যু হয়েছে সাবমেরিনে থাকা পাঁচজনের। মার্কিন সময় বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ পাওয়া যায় সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ। প্রসঙ্গত, গত রবিবার থেকে নিখোঁজ ছিল সাবমেরিন টাইটান।
ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হার্ডিংয়ের ইনস্টগ্রাম পোস্টকে উদ্ধৃত করে আমেরিকার উরপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, গত ১৮ জুন গ্রিনিচ সময় অনুযায়ী (জিএমটি) দুপুর ১২টা নাগাদ পাঁচ অভিযাত্রীকে নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে অতলান্তিকের ১৩ হাজার ফুট গভীরে নেমেছিল টাইটান। সমুদ্রের উপরে থাকা সহযোগী জাহাজ ‘পোলার প্রিন্স’কে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর সিগন্যাল পাঠানোর কথা ছিল টাইটানের। কিন্তু দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ টাইটানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে টাইটানের ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টাইটান না ফেরায় আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে খবর পৌঁছয়।
দীর্ঘ তিন-চার দিন খোঁজাখুঁজির পর মেলে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। আমেরিকার উপকূলরক্ষা বাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মউগার জানান, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ১৬০০ ফুট দূরেই পাওয়া গিয়েছে টাইটান সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ। কিন্তু পাঁচ অভিযাত্রীর দেহের কোনও হদিস মেলেনি। তাঁদের দেহ উদ্ধারের সম্ভাবনাও ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে বলেও জানিয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনী।
২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও টাইটানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। ১৯ জুন আমেরিকা এবং কানাডা টাইটানের খোঁজে নামে। সমুদ্রের ৪০০০ মিটার গভীরে শব্দ নিরীক্ষণ যন্ত্র পাঠানো হয়। সিএনএন এবং রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে ৩০ মিনিট অন্তর বেশ কয়েকটি জোর শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। কোথা থেকে শব্দ আসছিল সেটি চিহ্নিত করে ২১ জুন দূরনিয়ন্ত্রিত একটি সমুদ্রযানকে জলের গভীরে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: Cyclone Mocha: আজ রাতেই তৈরি হবে মোকা, ঘণ্টায় ১৩০ কিমি গতিতে কোথায় আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস
আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে জোরালো শব্দ চিহ্নিত করা গিয়েছিল, সেই সময়েই কিছু একটা ঘটেছিল টাইটানের সঙ্গে। অনুমান করা হচ্ছে, জলের প্রবল চাপে ডুবোযানটি দুমড়ে গিয়েছিল। এই ধরনের ডুবোযান কার্বন ফাইবার এবং টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়। যদি তাতে কোনও ত্রুটি থাকে বা কোনও ভাবে চিড় ধরে তা হলে দুমড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ভাবেই হয়তো শেষের মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে ডুবযানের। ওই জলের চাপে কোনও মানুষেরই বেঁচে থাকার কথা নয়। উপরন্তু, সামুদ্রিক প্রাণীর আক্রমণও দেহ না পাওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন উপকূলরক্ষা বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, ভিতরের দিকে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে টাইটান। এই দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ব্রিটেনের ব্যবসায়ী হ্যামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানের ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ, তাঁর পুত্র সুলেমান, ওসেনগেট সংস্থার মুখ্য আধিকারিক স্টকটন রাশ এবং ফরাসি নাবিক পল হেনরি নারজিওলেট। উল্লেখ্য, টাইটানে করে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার জন্য মাথাপিছু আড়াই লক্ষ ডলার করে নিয়ে থাকে ওসেনগেট।
আরও পড়ুন: Narendra Modi: জিলকে ৭.৫ ক্যারেটের হিরে, জো বাইডেনকে ৮৬ বছর আগের উপনিষদ উপহার মোদীর