হামাস এর ফুল ফর্ম হল হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া এরা গাজা শহর নিয়ন্ত্রণ করে। হামাসের ইজ্ আদ-দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড নামে একটি সামরিক শাখা আছে।হামাস ২০০৭ সালে ইসরায়েলকে হঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে। এরপর ইসরায়েলের সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করে তারা।এই যুদ্ধগুলিতে হামাস ইসরায়েলের দিকে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেও ইসরায়েলের দিকে রকেট নিক্ষেপ করার জন্য উৎসাহ দিয়েছে। তারা ইসরায়েলে অনেকবার মারাত্মকভাবে হামলা পরিচালনা করেছে।
জবাবে ইসরায়েলও বারবার হামাসকে বিমান হামলার মাধ্যমে আক্রমণ করেছে এবং মিশরের সাথে একজোট হয়ে ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকাকে অবরোধ করে রেখেছে। হামাসের সন্ত্রাসের পাল্টা সন্ত্রাস চালিয়েছে ইসরাইল। যেহেতু তারা সামরিক দিক দিয়ে খুবই সবল, তাই হামাসের হামলার জবাব প্রতিবারই দিয়েছে অসহায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে।এবার তাই দেখছে গোটা বিশ্ব।
মূলত ইরান হামাসকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে, তারা হামাসকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়।ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি অন্যান্য অনেক প্রভাবশালী দেশ হামাসকে একটি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ বলে দাবি করলেও, বহু দেশ মনে করে হামাস আসলে আত্মরক্ষার লড়াই লড়ছে।‘ইহুদি হানাদার’দের দেশ ইজরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে স্বাধীন প্যালেস্টাইন গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য।
হামাসের নিয়ন্ত্রণ মূলত গাজায়। গাজা উপত্যকা ইসরায়েল, মিশর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে একটি ৪১ কিমি দীর্ঘ এবং ১০ কিমি-প্রশস্ত অঞ্চল। যেখানে প্রায় ২৩ লাখ লোক বসবাস করে এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।ইসরায়েল গাজা এবং এর উপকূলীয় এলাকার আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করে পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে কারা যাতায়াত করবে ও কী ধরনের পণ্য প্রবেশ করতে পারবে তা তদারকি করে। একইভাবে মিশরও গাজা সীমান্ত দিয়ে কারা প্রবেশ করবে তাও নিয়ন্ত্রণ করে। বলা যেতে সম্পূর্ণ খবরদারি করে তারা।
বর্তমানে পশ্চিম তীর এবং গাজা ফিলিস্তিনি অঞ্চল হিসাবে পরিচিত, রোমান সময়ে পূর্ব জেরুজালেম এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিন নামে পরিচিত ছিল। বাইবেলে ওই অঞ্চলে একটি ইহুদি রাজ্যের কথা উল্লেখ্য আছে। তাই ইহুদিরা ওই অঞ্চলকে তাদের প্রাচীন মাতৃভূমি হিসাবে দাবী করে।বন্দুকের বলে ইসরায়েলকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় ১৯৪৮ সালে।
ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকা। এখানে ১৯৩০’র দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদীরা কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল।ইহুদিদের পাশেই ছিল ফিলিস্তিনী আরবদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল।সে সময় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।কিন্তু ১৯৩০’র দশকে ফিলিস্তিনীরা বুঝতে পারলো যে তারা ধীরে-ধীরে জমি হারাচ্ছে। ইহুদিরা দলে-দলে সেখানে আসে এবং জমি কিনতে থাকে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত লাখের মতো ফিলিস্তিনী বাস্তু-চ্যুত হয়েছে। তারা ভেবেছিল দ্রুত সমস্যার সমাধান হলে তারা বাড়ি ফিরে আসতে পারবে।কিন্তু ইসরায়েল তাদের আর কখনোই বাড়িতে ফিরতে দেয়নি।
১৯৮৭ সালের ৯ ডিসেম্বর শুরু হয় প্রথম ইন্তিফাদা। চলে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ১৯৮৭ সালে জন্ম নেয় হামাস। গাজায় এই আন্দোলন কিছুটা শান্তিপূর্ণ ভাবে শুরু হলেও রাশ চলে যায় আরব জঙ্গিদের হাতে যার ফলে নিশানা করা হয় নিরীহ ইজরায়েলি জনতাকে। পালটা দেয় তেল আভিভও। সেই সংঘাতে প্রাণ হারান হাজারেরও বেশি প্যালেস্টাইনের নাগরিক।
ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের শাসনভার রয়েছে মাহমুদ আব্বাসের প্যালেস্তিনিয়ান ন্যাশনাল অথরিটির (পিএনএ) হাতে। ইজরায়েলের সঙ্গে মিলেমিশেই কাজ করে তারা। তবে গাজায় কিন্তু হামাসেরই রাজত্ব। প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে প্রেসিডেন্ট বলে স্বীকার করে না তারা। ২০০৭ সালে আব্বাসপন্থী ফতেহকে লড়াইয়ে হারিয়ে পঠিয়ে দেয় হামাস। ইজরায়েলি বোমায় বিধ্বস্ত গাজায় প্যালেস্তিনীয়দের মধ্যে আক্রোশ চরমে পৌঁছেছে। ফলে হামাসের প্রতিপত্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। ধাক্কা খাবে মাহমুদ আব্বাসের ছবি।